সাদা লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা
সূচিপত্রঃ সাদা লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা
- সাদা লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা
- পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা
- লজ্জাবতী গাছের রহস্য
- সাদা লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায়
- লজ্জাবতী গাছের অপকারিতা
- শেষ কথা
সাদা লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা| সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের উপকারিতা
সাদা আর লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা বা সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের কমবেশি সকলেরই জানা। সারা বিশ্বে সাধারণত টাচ মি নট প্ল্যান্ট নামে লজ্জাবতী গাছের পরিচিত। ফিলিপাইনের মাকাহিয়া উদ্ভিদ কা এবং ভারতে চুইমুই উদ্ভিদ যাকে বাংলাদেশে বেশি ডাকা হয় লজ্জাবতী নামে। এটি একটা বিস্ময়কর ওষধি ব্যবহার এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সহ আশ্চর্যজনক একটা ভেষজ উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদের সমস্ত অংশই ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ভারতে এটা আয়ুর্বেদ সিদ্ধ এবং ইউনানী ধরনের ওষুধে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
লজ্জাবতী গাছের কয়েক টা উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
দাঁতের মাড়ির ক্ষতঃ গাছসহ ১৫ থেকে ২০ সে.মি. লম্বা মূল পানির মধ্যে সিদ্ধ করে দিনে তিনবার সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের মাড়ির ক্ষত সারানো ভালো হয়।
আমাশয়ঃ অনেকেরই পুরনো আমাশয় আছে। মলত্যাগের সময় হলেই অপেক্ষা করতে আর পারেন না। আবার শক্ত মলের গায়ে সাদা সাদা আম জড়ানো অনেকেরই থেকে থাকে। সে ক্ষেত্রে লজ্জাবতীর ডাটা ১০ গ্রাম এবং পাতা চার কাপ পানির মধ্যে সিদ্ধ করে এক কাপ পানি থাকা অবস্থায় তা নামিয়ে ছেকে নিতে হবে। খেলে অবশ্যই উপকার হবে।
আরো পড়ুনঃ আদা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ অনেকের জামা বা গেঞ্জিতে ঘেমে হলদে দাগ লেগে যায় এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে লজ্জাবতী গাছের পাতা ও ডাটার নির্যাস তৈরি করে নিয়ে শরীর ও বগল লাগাতে হবে বা মুছতে হবে। তাহলে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে পারা যাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ মূল সাত থেকে আট গ্রাম থেঁতো করে পানিতে সিদ্ধ করে ওই পানি ছেঁকে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যর মত অসুখ দূর হবে, উপকৃত হবেন। এছাড়াও সাদা লজ্জাবতীর মূল ও পাতা পিষে রস বের করে নিয়মিত পান করলে ফিস্টুলিয়া ও পাইলস থেকে আরাম পাওয়া যাবে।
পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা
আমাদের সকলের খুব পরিচিত একটা গাছ হচ্ছে লজ্জাবতী। কেউ আবার একে লাজুক পাতা বলে থাকে। ঔষধি বা বর্ষজীবী গুল্ম আগাছা গাছ এটা একটা। তেতুলের পাতার মতো অনেকটা। হাত পায়ের স্পর্শ পেলে লজ্জাবতীর পাতা বন্ধ হয়ে হয়ে যায়। লজ্জাবতীর পাতা লম্বা ও সরু, দুই থেকে ২০ জোড়া থাকে। এর ফুলগুলোর রং গোলাপি ও বেগুনি। এর পাতাতে এন্ড্রেনালিন ও এ্যাকোলয়ড়ে এর সব উপকরণ গুলো এতে থাকে। এছাড়াও টিউগুরিনস এবং মূলে ট্যানিন পাওয়া যায়। যা পুরুষাঙ্গের শীতলতা দূরীকরণ সহ বিভিন্ন ধরনের অসুখ সারাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। লজ্জাবতী লতার সমগ্র উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে ওষুধ হিসেবে।
ধারাবাহিকভাবে পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা গুলো আলোচনা করা হলো-
পুরুষাঙ্গের শৈথিল্যঃ লজ্জাবতীর বীজ দিয়ে তেল তৈরি করে সেই তেল পুরুষাঙ্গে লাগিয়ে আস্তে আস্তে মালিশ করলে পুরুষাঙ্গ অনেক দৃঢ় হয়। স্ত্রীর যৌনাঙ্গের স্বাভাবিক উত্তেজনা ফিরিয়ে আনাতে সহায়তা করে।
রমণী অতৃপ্তিঃ যোনিদ্বার কয়েকটা বাচ্চা হবার পর অনেকটা শিথিল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে লজ্জাবতীর নির্যাস দিয়ে ডুশ নিলে এবং সিদ্ধ গাছের পাতা নির্যাস দিয়ে তেল তৈরি করে সেই তেলে একটা কাপড় ভিজিয়ে যোনির দ্বারে রাখলে ভালো ফলাফল পাবেন। এছাড়াও পাতার পেস্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে অন্ডকোষের পানি জমা সারাতে।
লজ্জাবতী গাছের রহস্য
লজ্জাবতীর গাছটাকে গাছ বললেও, এটা কোন বড় ধরনের গাছ নয়। এটা এক প্রকারের লতা ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। তবে এরা মনুষ্য সমাজে বিশেষ একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য সুপরিচিত। বিশেষ করে উদ্ভিদবিজ্ঞানী মহলে এরা বেশি সুপরিচিত। লজ্জা পাওয়া হচ্ছে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এদের বৈশিষ্ট্য এর সাথে মিল রেখেই লজ্জাবতী নামকরণ করা হয়েছে। কারো সাথে কথা বলার সময় লাজুক মানুষ যেরকম লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
ঠিক তেমনি এরাও কারো শরীরের সংস্পর্শ পেলে লজ্জাতে জড়োসড় হয়ে ওঠে। পাতাগুলো নুইয়ে যায় এবং গুটিয়ে আসে সম্পূর্ণ শরীর। মিমোসা পুডিকা হচ্ছে লজ্জাবতীর বৈজ্ঞানিক বা বোটানিক্যাল নাম।। বর্তমানে সারা বিশ্বের প্রায় সবখানেই এই গাছ ছড়িয়ে পড়েছে। এই গাছটি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এটা হচ্ছে বর্ষজীবী উদ্ভিদ। শাখান্বিত ও ছোট ছোট কাটা এবং কাণ্ড খাড়া আছে। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে সাধারণত ছোট ও গোলাকার ফুল এই গাছে ফোটে।
আরো পড়ুনঃ কমলার খোসার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতার বিস্তারিত
সাদা ও গোলাপি ফুলের রং হয়ে থাকে। গাছের পাতা গুলোর রং গাঢ় সবুজ এবং দেখতে ছোট। গাছটি সাধারণত দেড় থেকে দুই ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। লজ্জাবতী গাছগুলো এরকম আচরণ কেন করে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা ও অনেক গবেষণা ও চিন্তাভাবনা করেছেন। তাদের মতানুসারে, এই গাছের পাতার গোড়ার অংশটা একটু ফুলে থাকে। আর এই ফোলা অংশের মধ্যে বড় বড় কোষ থাকে। যখন এসব কোষ পানি ভর্তি হয়ে থাকে তখন গাছের পাতার বোটা টা ফুলে যায় এবং ডাটা সোজা হয়ে থাকে।
কিন্তু কেউ এই গাছে হাত দিয়ে স্পর্শ করলে তার পুরো শরীরে একটা বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ্যাসিটাইলিন নামক একপ্রকারের রাসায়নিক পদার্থ এদের শরীরে রয়েছে। এই এ্যাসিটাইলিন কোলিন পদার্থের মাধ্যমে লজ্জাবতী গাছের পুরো অঙ্গে এই বিদ্যুৎ প্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে। তখন এক কোষ থেকে আরেক কোষে এই রাসায়নিক পদার্থই দ্রুত ছুটতে থাকে। যার ফলে লজ্জাবতী গাছের কোষ থেকে খনিজ লবণ বের হয়ে আসে।
খনিজ লবণ বের হয়ে আসার সাথে কোষের মধ্যে যে পানি জমা ছিল সেটাও বের হয়ে আসে। যার ফলে কোষগুলো চুপসে যেতে থাকে। তখন তাদের চাপ ও শক্তি কমে যায়। গাছের পাতা গুলো তখন শক্তি হারিয়ে ফেলে ও দুর্বল হয়ে নুয়ে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ এরকম অবস্থায় থাকে। এরপর বিদ্যুৎ প্রবাহ আবার বন্ধ হয়ে গেলে কোষে ধীরে ধীরে পানি জমতে শুরু করে।
সাদা লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায়| সাদা লজ্জাবতী গাছের ছবি
লজ্জাবতী গাছ কে গাছ বললেও এটা মূলত বড় ধরনের গাছ নয়। এটা লতা ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। সাদা লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায় হচ্ছে একটা গাছ আছে ত্রেকাটা এবং অন্যটা হচ্ছে চৌকাটা। সাদা গাছটার চৌকাটা চারটি কাটার দার। অর্থাৎ গাছের চারপাশে থাকবে কাটা যেমনটা পূর্ব-পশ্চিম উত্তর-দক্ষিণ। এই সাদা লজ্জাবতী গাছটা পাওয়া খুব দুর্লভ। সাদা লজ্জাবতী আর লাল লজ্জাবতী গাছের মূলত পার্থক্য করা হয়ে থাকে রংয়ের মাধ্যমে। এদের গাছের রং আলাদা কিন্তু পাতা একই রকম। নিচে কয়েকটা সাদা লজ্জাবতী গাছের ছবি চেনার উপায় সহজ করার জন্য দেয়া হল-
www.thesundor.com
লজ্জাবতী গাছের অপকারিতা
লাজুক লতা হচ্ছে লজ্জাবতী গাছের অন্য নাম। ওষুধের রানী বলা হয় লজ্জাবতী গাছকে। আগাছা, বর্ষজীবী গুল্ম বা ওষুধ জাতীয় গাছ হচ্ছে লজ্জাবতী। এর কান্ডগুলো লতানো ও শাখা প্রশাখায় অনেক ভরা। কাটাযুক্ত ও লাল রংয়ের সাদা রংয়ের হয়ে থাকে লজ্জাবতী গাছ। লজ্জাবতী গাছ সহজে ভাঙে না তবে একে পেঁচিয়ে টানা হলে ছিড়ে যায় এবং লজ্জাবতী গাছ কিছুটা শক্ত।
আরো পড়ুনঃ থানকুনি পাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
লজ্জাবতী গাছের পাতাগুলো যৌগিক পত্র। বিপ্রতীপভাবে কয়েক জোড়া পাতা থাকে কয়েক জোড়া পাতা থাকে। তেতুল পাতার মত অনেকটাই। হাত পায়ের স্পর্শ পেলে লজ্জাবতী গাছের পাতা বন্ধ হয়ে যায়। সর্বগুণের অধিকারী লজ্জাবতী গাছ। এর কোন অপকারিতা নেই বললেই চলে।
শেষ কথাঃ সাদা লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা
সাদা লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের উপকারিতা পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোষ্টটি ভালোভাবে পড়ুন, আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। সাদা লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।
আজ আর নয়, সাদা লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দেবো। তাহলে আমাদের আজকের এই সাদা লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সম্পর্কিত পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। ২৩৭৬৬
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url