মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে। মহিলারা কবর জিয়ারত করতে পারবেন তবে বেপর্দা হয়ে কবর জিয়ারত করা যাবে না। পর্দা রক্ষা করে সম্ভব হলে কেবল নারীরা আপনজনদের কবর জিয়ারত করতে পারবেন।
কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কবরস্থানে কান্নাকাটি বা যে কোন ধরনের শোরগোল করা যাবে না। কারণ কবর জিয়ারত মানুষকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ কারণেই কবর জিয়ারত করা সুন্নত। তবে এর সুন্নত আমলটি কি শুধু পুরুষেরাই পালন করতে পারবে নাকি নারীরাও পারবে। এ সম্পর্কে আমাদের আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব।সূচিপত্রঃ মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া
- ভূমিকা
- মহিলাদের কবর জিয়ারত
- মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম
- মহিলাদের কবর জিয়ারতের দোয়া
- মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা
- মহিলাদের কবর জিয়ারতের শর্ত
- মহিলাদের কবর জিয়ারতের সতর্কতা
- শেষ কথা
ভূমিকাঃ
দুনিয়ার খ্যাতি সম্পদের প্রতিযোগিতা কিংবা ক্ষমতার মোহ কমাতে কবর জিয়ারতের বিকল্প নেই। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে কবর জিয়ারত করতে বলেছেন। কবর জিয়ারত করা সুন্নত। প্রথমে নারীদের কবর জিয়ারতের অনুমতি ছিল না। নারীর কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়ার পরপরই রাসুল সাঃ এর মেয়ে ফাতেমা ও স্ত্রী হযরত আয়েশা রাঃ নিজেদের আপনজনদের কবর জিয়ারত করেছেন হাদিস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়।
কবর মানুষকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় ভেসে ওঠে পরকালীন জীবন তথা জান্নাত কিংবা জাহান্নামের কথা। যারা মানুষকে দুনিয়া বিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় মৃত্যুর চিন্তা আত্মাকে বিদগ্ধ করে। চলুন আমাদের আর্টিকেলের এই পর্বে আমরা জেনে নেই মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া গুলো।
মহিলাদের কবর জিয়ারতঃ
এক সময় নারীদের কবর জিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পরবর্তীতে তা তুলে নেওয়া হয়। ইসলামের প্রথম যুগে নারীর জন্য কবর জিয়ারত করা নিষেধ ছিল পরে নারীদের কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয় বিধায় তারাও কবর জিয়ারত করতে পারবেন। একাধিক হাদীস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়-
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক ও হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কবর জিয়ারত করতেন।হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কবর জিয়ারত করতেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী মুলাইকা বলেন একদিন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-
কবরস্থান থেকে আসলেন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কোথা থেকে আসলেন তিনি বললেন আমি আমার ভাই আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকরের কবরের কাছ থেকে আসলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেননি?
তিনি উত্তরে বললেন হ্যাঁ রাসুল সাঃ কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে কবর জিয়ারতের আদেশ করেছিলেন।( মুস্তাক রাকে হাকেম, বাইহাকি )
মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়মঃ
কবরস্থানে যাওয়ার পর সর্বপ্রথম জিয়ারতের দোয়া পড়বেন। এরপর কবরবাসীর ঈসালে সওয়াবের নিয়তে দুরুদ শরীফ ও বিভিন্ন সূরা ইত্যাদি পড়বেন। মৃতের বা কবরবাসীর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন। হাদীসে কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে কিছু সূরার বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ হয়েছে। পাশাপাশি দরুদ শরীফের ফজিলতের কথাও এসেছে তাই দুরুদ শরীফ, সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস, আয়াতুল কুসরি ও অন্যান্য যেসব সূরা সহজ মনে হয় সেগুলো পড়ে সোওয়াব উপহার দেবেন।
কবরবাসীকে। আপনি যখন কবর জিয়ারত করতে যাবেন তখন কবরকে সামনে রেখে দুই হাত তুলে দোয়া করা উচিত নয়। তাই কবরকে পেছনে রেখে কিংবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে এরপর কেবলামুখী হয়ে দোয়া করা উচিত। আবার কেউ চাইলে হাত না তুলে মনে মনেও দোয়া করতে পারেন।
মহিলাদের কবর জিয়ারতের দোওয়াঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাজাল্লাহ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করতেন-
" আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর, ইয়াকুফিরু ল্লাহু লানা ওয়ালা কুম, ব আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আ-সার"।
অর্থঃ হে কবরবাসী তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছো এবং আমরা পরে আসছি। ( সুনানে তিরমিজি হাদিস ১০৫৩ )
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন-
" আসসালামুয়ালাইকুম দারা কবাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহ বিকুম লা-হিকুন"
অর্থঃ মুমিন এই ঘরবাসীদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাল্লাহ আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব।( সহীহ মুসলিমঃ ২৪৯ )
মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিষেধাজ্ঞাঃ
মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম। নারীর কবর জিয়ারতের নিষেধাক্কার সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইমাম তিরমিজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন ইসলামিক স্কলারদের মতে যে হাদিস কবর জিয়ারতকারীর নারীদের অভিশাপ করা হয়েছিল সেটি ছিল ইসলামের প্রথম যুগের হানিস।
তখন কবর জিয়ারত ইসলামের নিষিদ্ধ ছিল পরবর্তীতে যখন নিষেধাজ্ঞা উঠে নিয়ে কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয় তখন সে অনুমতি পুরুষ নারী নির্বিশেষে সবার জন্যই দেওয়া হয়েছে। নারীদের কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়ার পরেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর মেয়ে ফাতেমা ও স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের আপনজনের কবর জিয়ারত করেছিলেন।
মহিলাদের কবর জিয়ারতের শর্তঃ
মহিলাদের কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে এটা যেমন ঠিক তেমনি মহিলাদের কবর জিয়ারতের রয়েছে শর্ত। যেমন কবর জিয়ারত করতে গিয়ে বেপর্দা হওয়া যাবে না। পর্দা রক্ষা করে সম্ভব হলেই কেবল নারীরা আপনজনদের কবর জিয়ারত করতে পারবেন। তাই নারীদের জন্য কবরস্থানের পরিবেশের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কবরস্থানে অহেতুক কান্নাকাটি করা যাবে না বা কোনরকম শোরগোল করা যাবে না।
মহিলাদের কবর জিয়ারতের সতর্কতাঃ
মহিলারা কবর জিয়ারত করতে পারবে তবে বেপর্দা হয়ে কবর জিয়ারত করতে যাওয়া যাবেনা। পদ্মা পবিত্রতার সব সত্য রক্ষা করে নারীরা আপন জনের কবরের কাছে যেতে পারবেন। তবে তাদের জন্য পুরুষের মতো কবর জিয়ারতের সাধারণ নিয়ম প্রযোজ্য নয় কারণ ইসলামের শত্রুরা নারীর কবর জিয়ারতকে অমর্যাদা হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করে।
আর যারা ইসলামী শরীয়তের অনুসরণ ও অনুকরণ করে চলেন তারা বেগানা পুরুষের কবরের পাশেও পর্দা রক্ষা করেন অবশ্যই একাকী কিংবা পারিবারিক কবরস্থানে যাওয়া বা কাছ থেকে দেখা তাদের জন্য দোয়া করা মহিলাদের জন্য নিষেধ নয়। কবর জিয়ারতের অনুমতি থাকলেও মহিলাদের জন্য জানাজার নামাজের শরিক হওয়ার কোন বিধান ইসলামী শরীয়তে নেই।
আবার আলাদাভাবে জানাজার নামাজ বা মূল জামাতে কোথাও তারা জানাযা পড়তে পারবেন না। নারীদের জন্য জানাজা ওয়াজিব নয় তবে তারা মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া দুরুদ কোরআন তেলাওয়াত দান সাদকা ইত্যাদি করতে পারবেন। ( জামিউল ফাতাওয়া )
শেষ কথাঃ মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, একজন মুমিন মুসলমান নারীর উচিত পদ্মা ও পবিত্রতার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। পদ্মার খেলাফ হয় এমন অনুগামী হয়ে পুরুষদের সংশ্রব ও সংমিশ্রণ এড়িয়ে চলা। কবরের পাশে উচ্চস্বরে কথা বলা ও শোরগোল থেকে মুক্ত থাকা। আপনি যদি মনে করেন কবর জিয়ারত করতে গিয়ে পদ্মা ও পবিত্রতার খেলাপ হবে তবে কবর জিয়ারত করতে না যাওয়াই উত্তম।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনারা যারা এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হন তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এবং আমাদের আর্টিকেলের মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান যাতে করে আমরা সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি। এবং এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url