আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - আমড়ার পুষ্টিগুণ
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো আমড়া খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা - আমড়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। আমড়া একটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। আমড়া তো প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে যা রক্তস্বল্পতা রোধ করতে সাহায্য করে। আপনি যদি নিয়মিত আমরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তবে অনেক রোগ থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।
আমড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকায় আপনার শরীরের হিমোগ্লোবিন এবং মায়োগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করবে। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েন তবে জানতে পারবেন আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - আমড়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। টক মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি খেতে চায় না এমন লোক খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।সূচিপত্রঃ আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - আমড়ার পুষ্টিগুণ
- ভূমিকা
- আমড়া খাওয়ার উপকারিতা
- আমড়া খাওয়ার অপকারিতা
- আমড়ার পুষ্টিগুণক
- আমড়া খাওয়ার নিয়ম
- শেষ কথা
ভূমিকাঃ
আমড়া আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী আমরা অনেকেই জানিনা। সেজন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা -আমড়া পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। ভিটামিন মিনারেল সমৃদ্ধ এই ফলটি খেলে বহু রোগ থেকে মুক্তি মিলবে আপনার। কাঁচা আমড়া খাওয়ার পাশাপাশি তরকারি রান্না করে, আচার করে,জেলি চাটনি করেও খাওয়া যায়।
যতগুলো দেশীয় ফল রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম দেশীয় ফল হল আমড়া। এ ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমড়া ভিটামিন সি, আঁশ,থায়ামিন,রিবোফ্লোবিন,আয়রন ক্যালসিয়াম সহ আরো অন্যান্য উপাদান পাওয়া যায় আমড়াই।এক গবেষণায় দেখা গেছে একটি আপেলের চেয়ে আমড়াতে ক্যালসিয়াম আয়রন বেশি থাকে।
আমড়া খাওয়ার উপকারিতাঃ
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পেটের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমড়া ভূমিকা অনেক। আমড়া খেতে সুস্বাদু এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর মৌসুমী একটি ফল এবং আমড়া দামেও খুব সস্তা। আপনি যদি প্রতিদিন আমরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তবে আপনাকে পুষ্টিহীনতায় আর ভুগতে হবে না। কারণ আমরা তে রয়েছে একটি আপেলের চেয়ে ক্যালসিয়াম আয়রন অনেক বেশি। চলুন নিম্নে জেনে নেই আমরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়ঃ
আমড়া রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- পেটের সমস্যা দূর করেঃ
আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত আমড়া রাখতে পারেন তবে আপনার পেটের যেকোনো ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
- চোখ ভালো রাখেঃ
আমড়া কেরোটিন এইডস উপাদান চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। চোখের যে কোন প্রকার রোগ যেমন রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি দেয় আমড়া
- পেশী সংকোচন এবং ইস্নায়ু সংকেত সঞ্চালন করেঃ
আমড়ারার থায়ামিন উপাদান বেশি সংযোজন এবং স্নায়ুর সংকেত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে।
- ত্বক ভালো রাখেঃ
ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস হলো আমড়া ভিটামিন সি কোলোজেন উৎপাদন করে যা ত্বকের সুস্থতার জন্য খুবই উপকারী ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে আমড়া খান এছাড়া আমড়া ত্বকের বলিরেখা দাগ ছোপ ব্রণ নিরময় করে।
- সর্দি কাশি নিরাময় করেঃ
যাদের ঘন ঘন সর্দি কাশি লেগেই থাকে তারা আমরা খেতে পারেন এতে করে সর্দি কাশি জনিত সমস্যা থেকে আপনি খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবেন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ
যারা কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যায় ভুগছেন তারা আমরা খেতে পারেন এতে পেট ভালো থাকবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকে দূরে থাকবেন আপনি।
- বদহজম দূর করেঃ
যাদের খাবার সহজে হজম হয় না একটু বেশি খাবার খেলে বমি হয়ে যায় তারা হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য খাদ্য তালিকায় আমরা রাখতে পারেন।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করেঃ
আমরা রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। যা হার্ট এটাক স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
- রক্তশূন্যতা দূর করেঃ
আমরাই পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন আছে যার রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। রক্ত হিমোগ্লোবিন তৈরির সাহায্য করে আর আমরা রক্তের চাহিদা পূরণ করে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
- পাকস্থলির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখেঃ
আমড়ায় এক ধরনের পেকটিম জাতীয় ফাইবার পাওয়া যায় যা পাকস্থলীর কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে পেট ভালো রাখে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ
আমরা শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা কমে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। ইহা শরীরের প্রেসার নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
যখন দেখবেন আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে তখন শরীরে নানা ধরনের রোগের উপস্থিতি লক্ষ্য করতে পারবেন আপনি। শরীরের ইমিউনিটি স্ট্রং করার জন্য খাদ্য তালিকায় আপনি নিয়মিত আমড়া রাখুন।
- মুখের রুচি বৃদ্ধি করেঃ
যাদের মুখে অরুচি ক্ষুধা মন্দা খাবার খেতে ভালো লাগে না তারা মুখে রুচি বৃদ্ধির জন্য খাদ্য তালিকায় আমরা রাখুন। এই আমড়া আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত খেতে পারেন তবে আপনার শরীরকে নানা রকম রোগ থেকে রক্ষা করবে।
- হাড়ও দাঁত রক্ষণাবেক্ষণ করেঃ
আমড়াই ভিটামিন সি উপাদান রয়েছে যা হাড় ও দাঁত রক্ষণাবেক্ষণ করে। দাঁতের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে আমড়া খুবই উপকারী। যেমন দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের মাড়ি মজবুত করে, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করে।
- ফ্রি রেডিকেলস দূর করেঃ
আমড়ার এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রী রেডিকেলস দূর করে ক্যান্সার প্রতিরোধের সহায়তা করে।
- হাড় মজবুত করেঃ
আমড়ার ক্যালসিয়াম উপাদান হাড় মজবুত করে এবং দেহ গঠনে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
- মানসিক চাপ কমায়ঃ
মানসিক চাপ কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে আমড়ার বিভিন্ন উপকারী উপাদান।
- মূত্র-বদ্ধক হিসেবে কাজ করেঃ
শরীরের ক্ষতিকর উপাদান গুলো প্রস্রাবের সাহায্যে শরীর থেকে তরল বের করে দেয় আমড়া।
আমড়া খাওয়ার অপকারিতাঃ
প্রতিটা জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি তার অপকারিতা ও রয়েছে। অনুরূপভাবে আমড়ার যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতা রয়েছে যেগুলো জানা আমাদের সকলেরই দরকার। চলুন নিম্নে জেনে নিই আমরা খাওয়ার অপকারিতা গুলো-
আমাদের মধ্যে অনেকেরই মতে গর্ভবতী নারীদের আমরা খাওয়ার আগে সতর্ক হওয়া উচিত কারণ এতে গর্ভনিরোধক উপাদান রয়েছে যেহেতু আমরা টক জাতীয় ফল তাই গর্ভকালীন সময়ে আমরা খাওয়া যাবে কিনা তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিবেন যদি খাওয়া যায় তাহলে কতটুকু খাওয়া উচিত এবং কোন সময় খাওয়া উচিত সবকিছুই ডাক্তারের কাছে থেকে জেনে নিয়ে তারপরে খাবেন।
যেহেতু আমড়া একটি টক জাতীয় ফল সেজন্য আপনি যদি মাত্রা অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন তবে পেটে গ্যাস্ট্রিক,আলসার ,বদহজম পেটব্যথা হতে পারে।
আমড়ার পুষ্টিগুণঃ
আমড়ার পুষ্টিগুণ অনেক। আমড়ার পুষ্টিগুণ এবং আমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে উপরে আমরা আলোচনা করেছি। আপনি যদি নিয়মিত আমরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তবে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া আমড়া ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস। দেহ গঠনের ইহা গুরুত্বপূর্ণ রাখেন। তরুণ নিম্নে জেনে নেই আমরা পুষ্টিগুণ-
১০০ গ্রাম আমড়া থেকে কোন উপাদান কতটুকু পাওয়া যায় তা আমরা জানব-
- ক্যারোটিন-৮০০ মাইক্রগ্রাম
- ক্যালসিয়াম - ৫৫ মিলিগ্রাম
- চর্বি- ০.১ গ্রাম
- শর্করা - ১৫ গ্রাম
- ভিটামিন সি ৯২ মিলিগ্রাম
- আইরন - ৩.৯
- খাদ্যশক্তি - ৬৬ কিলো ক্যালরি
- ভিটামিন বি - ১০.২৮ মিলিগ্রাম
- অন্যান্য খনিজ পদার্থ ০.৬ মিলিগ্রাম
আমড়া খাওয়ার নিয়মঃ
আমড়া খাওয়ার তেমন কোন নিয়ম নেই। আপনার যখন ইচ্ছে হয় আপনি তখনই খেতে পারেন। আমাদের মধ্যে আমরা অনেকেই আমড়া খোসা ছিলে তারপরে খাই আবার অনেকেই আবার খোসাসহই খাই। যেমন-
- আমড়া ফালাফালা ভাবে কেটে কাসুন্দি মাখিয়ে খাই।
- আমড়ার সাথে লবণ গুড়া মরিচ মাখিয়ে খাই।
- তরকারির মত করে রান্না করে খাই।
- আবার আমরা আচার তৈরি করে।
- চাটনির মতো করে খায়।
- জেলির মতো করেও খায়
- তাছাড়া যার যার ইচ্ছেমতো করে অনেকভাবেও আমড়া খাওয়া যায়।
শেষ কথাঃ আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - আমড়ার পুষ্টিগুণ
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন আমরা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা - আমরার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। আমরা পুষ্টিগুণ অনেক। আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত আমরা যোগ করতে পারেন তবে আপনি নানা রকম রোগ থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করতে পারবেন।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এবং আমাদের যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আপনি আপনার মহামূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন। যাতে করে আমরা সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি। এবং এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আর্টিকেল যদি আপনি আরো পড়তে চান তবে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url