শীতকালে সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের আজকের আটে খেলে আমরা আপনাদের জানাবো সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা - শীতকালে সরিষার তেলের উপকারিতা। শীতকাল আসলেই আমরা সকলেই শীতে ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে নানা ধরনের পণ্য ব্যবহার করে থাকি। আমরা অনেকেই লোশন কেউ বা পেট্রোলিয়াম হিসেবে আবার কেউবা সরিষার তেল ব্যবহার করতে বেশি পছন্দকরি।
সরিষার তেলের মধ্যে নানা রকম প্রাকৃতিক গুণ রয়েছে যা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। কারণ সরিষার তেল এন্টি অক্সিজেনের ভরপুর। আর এই ভিটামিন আমাদের ত্বককে ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে। চলুন নিম্নে বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।
শীতকালে সরিষার তেলের উপকারিতাঃ
শীতকাল আসলেই আমাদের শরীরে নানা রকম ঠান্ডা জ্বর শুরু হয়ে যায়। এবং শরীরে নানা রকম ফুসকুড়ির সমস্যা ও দেখা দেয়। প্রাচীনকাল থেকে সরিষার তেল আমাদের এই সকল সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে সরিষার তেল যদি আপনি হালকা গরম করে শরীরে মালিশ করেন তবে আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করবে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক শীতকালে সরিষার তেলের উপকারিতা গুলো-
ঠান্ডা কম লাগেঃ
শীতকালে আমরা ঠান্ডায় খুব কষ্ট পাই। আর এই কষ্টের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শীতকালে আমরা যদি সরিষার তেল আমাদের শরীরের মালিশ করে তবে অনেকটাই ঠান্ডা কম লাগবে। এবং সরিষার তেলের আরও একটি গুণ রয়েছে যেটি হলো আপনি যদি সরিষার তেল নিয়মিত ভাবে শরীরের ব্যবহার করেন তবে আপনার পেশি মজবুত হবে।
দাঁতের জন্যঃ
আপনার দাঁত কে মজবুত ও দাঁতে ব্যথা দূর করতে শীতকালে সরিষার তেল দিয়ে দাঁত মাজন অথবা তেল দিয়ে অয়েল পেলিং করুন। শীতকালে আমাদের অনেকেরই ঠান্ডা লেগে দাঁত ব্যথা করে এটা একটি কমন সমস্যা যা আমরা ইচ্ছে করলেই সমাধান করতে পারি। আপনি যদি শীতকালে দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চান তবে সরিষার তেল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ক্ষুধা বাড়ায়ঃ
প্রিয় পাঠক বন্ধু আপনার কি ক্ষুধা কমে যাচ্ছে, কোন কিছুই কি আপনার খেতে ইচ্ছে করছেনা তাহলে সরিষার তেল দিয়ে মালিশ করুন এতে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে শক্তির মাত্রা বাড়বে এবং আপনার বেড়ে যাবে।
পেশীর ব্যথা উপশম করেঃ
দেশের ব্যথা উপশম করতে সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক কারণ সরিষার তেল প্রাকৃতিকভাবে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে, যা দ্রুত আপনার শরীরের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করবে। আপনি যদি নিয়মিতভাবে সরিষার তেল ব্যবহার করেন তবে আপনার শরীরে পেশি শীথল থাকবে এবং আপনাকে আরামদায়ক প্রভাব দেবে এবং শীতের সময় সরিষার তেল ব্যবহার করলে পেশির ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর।
ত্বক নরম রাখেঃ
শীতকালে আপনি যদি সরিষার তেল নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করেন তবে আপনার ত্বক হবে গভীরভাবে আর্দ্র কোমল ও মসৃণ। শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যায় এবং আপনি যদি সরিষার তেল নিয়মিত ভাবে ব্যবহার করেন তবে আপনার ত্বক ফেটে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। সরিষার তেলের পুষ্টিকর উপাদান ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখে।
প্রাকৃতিক এক্সফ্লোলিয়েটরঃ
শীতকালে সরিষার তেল প্রাকৃতিক এক্সফ্লোলিয়টর হিসেবে কাজ করে কারণ শীতকালে ত্বকের মৃত কোষ গুলো মৃদুভাবে সরিয়ে দেয় সরিষার তেল এতে ত্বক মসৃণ স্বাস্থ্যজ্জল হয়ে ওঠে এবং ত্বককে প্রাণবন্ত করে তোলে।
ত্বকের সংক্রমণ রোধ করেঃ
সরিষার তেলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান আপনার ত্বককে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে যদি আপনি নিয়মিতভাবে এটা ব্যবহার করেন। শীতকালে আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয়ে যায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে তখন আপনি ত্বককে রক্ষা করতে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের সমৃদ্ধঃ
ওমেগা তিন ফ্যাটি এসিডে সরিষার তেল ভরপুর জাতকের গভীরে গিয়ে ত্বককে পুষ্টি যোগায় এবং দীর্ঘস্থায়ী আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ত্বক এর সুরক্ষায় সরিষার তেল অত্যন্ত কার্যকর। কারণ শীতকালের ত্বকের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করে সরিষার তেল।
রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শরীর উষ্ণ রাখেঃ
শীতকালে আপনি যদি সরিষার তেল নিয়মিত ব্যবহার করেন তবে আপনার রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। এবং শরীর উষ্ণ রাখবে ফলে আপনাকে ঠান্ডা থেকে আরাম দেবে সরিষার তেল। এই তেলের উষ্ণতায়ক প্রভাব রক্তের সঞ্চালন প্রক্রিয়া করে যা শীতের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়ঃ
আপনি যদি সরিষার তেল নিয়মিত ব্যবহার করেন তবে আপনার ত্বককে নরম রাখবে এবং মসৃণ ও কোমল করে তুলবে। সরিষার তেল ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও প্রাণবন্ত করে তোলে। শীতকালে আপনি যদি নিয়মিতভাবে সরিষার তেল ব্যবহার করেন তবে সরিষার তেল আপনার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
চুলকানি কমায়ঃ
শীতকালের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় যার কারনে চুলকানি হতে পারে অনেকের ত্বকে। সেজন্য আপনি যদি শীতকালে নিয়মিতভাবে সরিষার তেল ব্যবহার করেন তবে আপনার ত্বকের শুষ্ক জনিত চুলকানি ও জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পাবেন। কারণ সরিষার তেল ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে ত্বককে আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বক মসৃণ ও কোমল রাখে।
চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করেঃ
আপনি যদি শীতকালে সরিষার তেল নিয়মিত আপনার মাথার ত্বকে ব্যবহার করেন তবে আপনার খুশকি ও চুল ভাঙ্গার সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবেন। কারণ শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় চুলকে পুষ্টি যোগায় এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে সরিষার তেল। চুলের গোড়া শক্তিশালী করে এবং চুলকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে দেয় এবং চুলের ভিত্তিতে সাহায্য করে ও চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সরিষার তেলের বিকল্প নেই।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধঃ
শীতকালে সরিষার তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলো ত্বকের কোষগুলো পন্ডিত জীবিত করে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমায়। সরিষার তেল নিয়মিত শীতকালে ব্যবহার করলে ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে যা শীতে খুবই প্রয়োজন শরীরের জন্য। কারণ সরিষার তেল এন্ড অক্সিডেন্টে ভরপুর এতে রয়েছে ভিটামিন ই আর ভিটামিন ই ত্বককে এক্সিডেটিইভ হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখেঃ
সরিষার তেলে রয়েছে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফেটি অ্যাসিড ওমেগা ফেটি এসিড মেনোসাচুয়েড এবং পলিয়েন্ট ফ্যাটি অ্যাসিড যা নানারকম রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি সরিষার তেল দিয়ে খাবার রান্না করে খান তবে আপনার হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকবে এর পাশাপাশি আপনি যখন ভর্তা কিংবা সালাদ তৈরি করবেন তখন অল্প করে সরিষার তেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এতে করে আপনার হৃদপিন্ড সুস্থ থাকবে।
ক্যান্সারের ঝুকি কমায়ঃ
আপনি যদি সরিষার তেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তবে সরিষার তেল আপনাকে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও এই তেল ব্যবহারে হাঁপানি কাশি এবং নানারকম সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে।
শীতকালে সরিষার তেলের অপকারিতাঃ
প্রতিটি জিনিসের যেমন ভাল দিক রয়েছে তেমন এর ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আমরা সকলেই জানি সেই প্রাচীন কাল থেকেই ঔষধি গুণের জন্য সরিষার তেল ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরিষার তেল ব্যবহার করা অতটাও ভালো প্রভাব বয়ে আনবে না। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, সরিষার তেলের উপকারিতা আছেবলে যে আপনি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্যবহার করে ফেলবেন এটা কিন্তু নয় এতে করে আপনার উপকারের বদলে অপকারই বেশি হবে।
সরিষার তেলে প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ এরই উচিত এসিড আছে যা শরীরে ট্রাই গ্লাসাইড তৈরি করে। যার কারণে হৃদপিন্ডে মারাত্মক ধরনের ক্ষতি হয় এছাড়াও ফুসফুসের ক্যান্সারও হতে পারে আবার অ্যানিমিয়াও হতে পারে আপনার। মনে রাখতে হবে আপনাকে আপনি যদি হঠাৎ করে সরিষার তেল বেশি পরিমাণে খাওয়া শুরু করেন তবে আপনার স্বাস্থ্য উপকারিতা বদলে স্বাস্থ্যের অপকারিতাই বেশি হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
আপনি যদি সরিষার তেল বাইরের কোন দোকান থেকে কিনে থাকেন তবে সেটা আসল তেল কিনা চিনতে হলে আপনাকে দোকান থেকে সরিষার তেল কিনে আনার পর দুই থেকে তিন ঘন্টা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। দুই থেকে তিন ঘন্টা পর যদি দেখেন সরিষার তেলের উপর সাদা রঙের কোন আস্তরণ দেখা দিয়েছে, কিংবা সরিষার তেল জমে গেছে তাহলে বুঝবেন তেলটি নকল।
শেষ কথাঃ শীতকালে সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, সরিষার তেল তীব্র হাইড্রেশন সরবরাহ করে এবং আপনার ত্বককে শুষ্কতা এবং ফাটল রোধ করে নরম এবং মসৃণ রাখে যা কঠোর ঠান্ডা শীতের মাসগুলোতেও প্রাণবন্ত থাকে। এছাড়াও আপনি যদি সরিষার তেল নিয়মিতভাবে ব্যবহার করেন তবে আপনার রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং শরীরকে উষ্ণ রাখবে।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তবে আপনার মহামূল্যবান কমেন্ট এর মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন যাতে করে আমরা সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url