মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়, এর কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়, এর কারণ লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগটি বহু পরিচিত একটি রোগ।
মানুষের স্তনের মধ্যে থাকা কোষগুলি যদি হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বাড়তে শুরু করে তখনই এই ক্যান্সারের উৎপত্তি হয়।এই ক্যান্সার রোগটি আমাদের শরীরে খুব সহজে হয়ে থাকে কারণ আমরা এই রোগটি সম্পর্কে তেমন সচেতন না।
ভূমিকাঃ
বেস্ট ক্যান্সার একটি বহুল পরিচিত একটি রোগ। এটা সম্পর্কে যদি আপনি সঠিক চিকিৎসা না করান তবে এটা ক্যান্সারের প্রকোপ আকার ধারণ করবে যার কারণে অনেকের মৃত্যু হয়ে থাকে। মানব শরীরের নানা অংশে ক্যান্সার হয়ে থাকে তবে বেস্ট ক্যান্সার একটি অন্যরকম। তাছাড়া এই বেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে আমাদের তেমন কোন ধারণা নেই।
বা অনেকেই জানিনা এ রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কিভাবে এটাকে শনাক্ত করব অথবা এই রোগ থেকে কিভাবে আমরা বাজবো। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক মেয়েদের বেস্ট ক্যান্সার কেন হয়, এর কারণ লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে।
কিভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ঃ
বর্তমান সময়ে মহিলারাই এই বেস্ট ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। কারণ স্তনের মধ্যে থাকা বিভিন্ন কোষগুলি অতিরিক্ত বেড়ে ওঠার কারণে শরীরে স্তনের আকার বাকৃতির পরিবর্তন হয়। প্রতিটি মহিলা ও পুরুষের স্তনের মধ্যে থাকা কোষগুলি যদি হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে বার্থডে থাকে তখন বেস্ট ক্যান্সারের উৎপত্তি হয়। তবে মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনে কারণে যুক্তকোষেই এই প্রকার ক্যান্সার বেশি দেখা যায়।
বেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণঃ
মেয়েদের বেস্ট পরীক্ষা না করে কখনোই ভেস্তে ক্যান্সার হয়েছে কিনা সেটা নির্ণয় করা যায় না। এজন্য আপনি যদি আপনার বেস্টে ক্যান্সার হয়েছে কি সেটা জানতে চান তবে ঘরোয়াভাবে স্তন ক্যান্সার সম্বন্ধে আমরা সকলেই সচেতন থাকতে পারি যদি আমরা বিশেষ কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারি। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনি পড়েন তবে আপনি জানতে পারবেন বেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক বেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো-
- স্তনের আকার পরিবর্তন হবে।
- স্থানের কোন কোন অংশেও ফুলে যেতে পারে।
- স্তন থেকে সাদা তরল বা পানির মত কোন স্রাব বা রক্ত মিশ্রিত তরল বেরিয়ে আসতে পারে।
- অভ্যন্তরে কোন পিন্ডের অস্তিত্ব অনুভূত হবে।
- বৃষ্টির আকার পরিবর্তন হবে এবং বেস্ট এর বোটা বা ত্বক লাগছে এবং শুষ্ক হয়ে যাবে।
- বাহুর নিচে বা হাড়ের কাছে ফোলা অনুভূত হবে।
বেস্ট ক্যান্সার হওয়ার কারণঃ
চিকিৎসা ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোন ক্যান্সারের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এই ধরনের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি দেখা দেয় যেমন-
- পঞ্চাশুদ্ধ মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি।
- বেস্ট ক্যান্সার অনেকের আবার বংশগত কারণে হয়ে থাকে।
- জেনেটিকস নাম বা বংশগত কারন।
- শরীরের মেদ বেশি হওয়া।
- বয়স এবং লিঙ্গ ৫০ উর্ধ্ব মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি হয়।
- হরমোন থেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে।
বেস্ট ক্যান্সারের প্রকারভেদঃ
Ductal carcinoma in situ
এই ক্যান্সার কে বলা হয় জিরো প্রি ক্যান্সারাউস। যদি আপনি চিকিৎসা করেন তবে রোগ সফলভাবে নির্মূল করা সম্ভব হয় । আবার যদি আপনি সঠিক চিকিৎসার জন্য সময়মতো রোগ নির্ণয় ভীষণ জরুরী বলে মনে করেন এই সময়।
Lobular carcinoma in situ
এই ক্যান্সার ও প্রি ক্যান্সার আউজ পর্যায়ে ভুক্ত এ অবস্থায় থেকে মালিক এন্ড বা স্তন ক্যান্সারে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য লোবুলার ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের নিয়মিত মেমোগ্রাম বা অনুরূপ টেস্ট করাতে বলা হয়।
Infiltrating ( invasive ) lobuiar carcinoma
এটি একটি সাধারণ স্তন ক্যান্সার। এটি তৈরি হয় দুগ্ধ নারীতে আর এই নালী ভেদ করে ক্যান্সার ধীরে ধীরে স্তনের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
Triple negative brest cancer
প্রধানত 15 পাচ্ছেন স্তন ক্যান্সার এই প্রকারের মধ্যে হয়। এই স্তন ক্যান্সার নির্ণয় এবং সফল চিকিৎসা অত্যন্ত দুরূহ।
Infiltrating ( invasive ) ductal carcinoma
অন্তত ১০ পাচ্ছেন থেকে 15 পাচ্ছেন স্তন ক্যান্সার এই প্রকারের মধ্যে হয়ে থাকে এর উৎপত্তি স্তনের দুগ্ধ উৎপাদক কোষগুলি থেকে হয়ে থাকে।
মেয়েদের বেস্ট ক্যান্সার কত দিনে ছড়ায়ঃ
বেস্ট ক্যান্সারকে রোগের ক্ষতিকারক ক্ষমতার অপর বিচার করে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। চলুন নিম্নে সেগুলো আমরা জেনে নিই-
Stage 0
এ পর্যায়ে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলি আক্রমণাক্তক হয় না ফলে স্তনের মধ্যে এবং শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে না।
Stage I
এ সময় ক্যানসার আক্রান্ত কোষ পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্যবান কোষগুলিকে আক্রমণ করা শুরু করে।
Stagr II
শান্ত প্রিন্টের আকার এই সময় দুই সেন্টিমিটারের থেকে ছোট থাকে এবং বৃদ্ধি পেয়ে তার ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
Stage III
এই পর্যায়ে ক্যান্সার আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে লসিকা বাহে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কোষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
Stage IV
এটি অন্তিম পর্যায়ে এবং রোগীর পক্ষে সফল চিকিৎসার সুযোগ থাকে না এই সময় ক্যান্সার হার ফুসফুস লিভার এবং মস্তিষ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে করে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
প্রতি ১৮০ দিনে বা প্রায় প্রতি ছয় মাসের মধ্যে স্তন ক্যান্সার এক পর্যায়ে থেকে আরেক পর্যায়ে বাড়তে পারে তাই বেস্ট এর আকার এবং গঠনের পরিবর্তন খুব ভালো করে পরীক্ষা করা উচিত এতে করে প্রাথমিক পর্যায়ে সতর্ক হওয়া যায় এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটা সেরে ওঠে। আপনি যদি বেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই সেটা যত দ্রুত সম্ভব একজন রেস্টার্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সারিয়ে তোলা উচিত।
মেয়েদের বেস্ট ক্যান্সারের প্রতিকারঃ
মেয়েদের বেস্ট ক্যান্সারের প্রতিকার গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-
- যেকোনো ধরনের তামাক জাতীয় পদার্থের নেশা বন্ধ করতে হবে।
- শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান এতে স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।
- হরমোন থেরাপি সীমিত রাখার চেষ্টা করুন।
- শারীরিকভাবে সক্রিয় ঠাকুর নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
- অতিরিক্ত মদ্যপানের সাথে সাথে স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয় পদ্ধতিঃ
মেয়েদের বেস্ট ক্যান্সার নির্ণয় করার জন্য বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নানারকম পদ্ধতির আবিষ্কার করা হয়েছে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক মেয়েদের বেস্ট ক্যান্সার নির্ণয় পদ্ধতি গুলো-
আল্ট্রাসনোগ্রামঃ
এ পরীক্ষার মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে স্তনের অভ্যন্তরের কোষ সমষ্টির ছবি তোলা হয় এতে স্বাভাবিক পরিবর্তন চোখে পড়ে।
এম আর ইঃ
এটার মাধ্যমে চুম্বকীয় এবং রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলিকে নির্দিষ্ট করা যায়।
পি ই টি স্ক্যানঃ
এ ধরনের টেস্টে বিশেষ রঞ্জকের ব্যবহার করে ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষ গুলির রঞ্জিত করা যায়। স্ক্যানের সময় এ বিশেষভাবে রঞ্জিত কোষগুলি সহজেই ধরা পড়ে এই পরীক্ষায় ক্যান্সারের বৃদ্ধির হার বিশেষভাবে বোঝা যায়।
ম্যামো গ্রামঃ
এটার মাধ্যমে এক্সপ্রেস এর সাহায্যে স্তনের আকার এবং গঠনের স্বাভাবিক পরিবর্তন সহজেই বোঝা যায় কারণ এটি ক্ষত সৃষ্টি করে না এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সারের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
বেস্ট ক্যান্সারের সময় কি খাবার খাওয়া উচিতঃ
মেয়েদের বেস্ট ক্যান্সার হওয়ার পরে যে খাবারগুলো খাওয়া উচিত সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-
- প্রচুর পরিমাণে তাজা শাকসবজি এবং ফল খাওয়া উচিত।
- সুষম খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে।
- সারাদিনের প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে অন্তত তিন থেকে চার লিটার পর্যন্ত।
- ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের যথেষ্ট যোগান থাকে এমন খাবার খেতে হবে প্রতিদিন।
শেষ কথাঃ মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়, এর কারণ, লক্ষণ ,চিকিৎসা ও প্রতিকার
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে ৫০ বছরের বেশি মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি কিন্তু যে কোন বয়সেই এই রোগ হয়ে থাকে। সেজন্য নিয়মিতভাবে ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজের শরীরে স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ গুলি পর্যবেক্ষণ করুন। এবং আপনি যদি দেখেন এই উপসর্গগুলি আপনার মধ্যে রয়েছে তবে অবশ্যই একজন রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, এতক্ষণ যারা ধৈর্য সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়েছেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হন তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন।এবং আমাদের আর্টিকেলের মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আপনি কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন যাতে করে আমরা সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url