শীতকালে আদা ও তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো শীতকালে আদা ও তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আপনি যদি শীতকালে আধা ও তুলসী পাতা খেতে পারেন তবে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ ও জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করবে।

শীতকালে আদা ও তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা

আদা ও তুলসী পাতার রস একসঙ্গে শীতকালীন অসুস্থতা সর্দি এবং ফ্লোর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। কারণ আদায় রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি যৌগসমৃদ্ধ এবং তুলসী রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য। 

ভূমিকাঃ

শীতকালে আদা সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে চিকিৎসা খাতে তুলসী গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। আকাশে কফ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে এছাড়াও এই পাতার পেস্ট শরীরের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। 

শীত আসতে না আসতেই আমাদের সকলেরই শুরু হয়ে যায় সর্দি কাশি এবং বদ হজমের মতো নানারকম সমস্যা। এবং এই সমস্যাগুলো যদি আপনি খুব সহজেই দূর করতে চান তবে শীতের সকালে প্রতিদিন আদা ও তুলসী পাতা খেতে পারেন এতে করে আপনার নানা রকম স্বাস্থ্যগত সমস্যা দূর হবে। 

আদার উপকারিতাঃ

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যে ব্যবহৃত একটি পরিচিত উপাদান হচ্ছে আদা। এটি মূলত রান্নায় সাত বাড়ানোর জন্য আমরা ব্যবহার করি মসলা হিসেবে। মসলা ছাড়াও আমরা আদাকে ভেষজ গুণ হিসেবে ব্যবহার করে থাকি কারণ আদা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান আপনি যদি নিয়মিতভাবে আদা খেতে পারেন তবে মিলবে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।

আদায় রয়েছে-পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সোডিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ,ভিটামিন এ,বি ৬, ই ও সি এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান সহ পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে। আপনি যদি নিয়মিতভাবে আদা খেতে পারেন তবে আদার পেশী শীতলকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। 

যা অন্ত্রের পেশি গুলোকে প্রশমিত ও শীতল করতে সাহায্য করে। খিচুনি এবং হজমের অস্বস্তি কমাতে আদার ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়াও আপনি যদি মনে করেন আপনার বমি বমি ভাব হচ্ছে তবে এক টুকরো আদা খেতে পারেন এতে করে আপনার বমি বমি ভাব দূর হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

আদার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর অপকারিতা ও রয়েছে। আপনি যদি গর্ভবতী হন তবে আপনাকে আদা প্রয়োজন অনুযায়ী খেতে হবে যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন তবে বেশির সংকোচন ঘটিয়ে প্রীটাম গর্ভপাতের ঝুঁকি তৈরি করে আদা। গর্ভাবস্থায় এক গ্রাম অথবা ১০০০ মিলিগ্রাম আদা আপনি খেতে পারেন।

আর যদি এর চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন তবে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খাবেন। আবার আপনি যদি হিমোফিলিয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে আদার গুনাগুন নেগেটিভ প্রভাব ফেলতে পারে আপনার শরীরে।

তুলশীপাতার উপকারিতাঃ

আমরা সকলেই জানি তুলসী পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে কিন্তু আমরা কি এটা জানি তুলসী পাতার অপকারিতাও রয়েছে। আপনি যদি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েন তবে জানতে পারবেন, শীতকালে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো শীতকালে আদাও তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা গুলো। চলুন নিম্নে জেনে নেই তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা গুলো-

আপনি যদি নিয়মিতভাবে তুলসী পাতা খেতে পারেন তবে আপনার শরীরের নানা রকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে যেমন-

  • সর্দি কাশি কমিয়ে দেবে
  •  গলা ব্যথা দূর করবে 
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করবে 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে 
  • ওজন কমাবে 
  • ডায়াবেটিস দূর করবে 

তুলসী পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর অপকারিতা ও রয়েছে আপনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন চলুন নিম্নে জেনে নেই কোন কোন সময় তুলসী পাতা এড়িয়ে চলব-

গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করানোর সময় আপনি যদি মাত্রাতিরিক্ত তুলসী পাতা খেয়ে ফেলেন তবে জটিলতা দেখা দিতে পারে তাই এ সময় তুলসী পাতা এড়িয়ে চলায় উত্তম। আবার আপনি যদি অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেয়ে ফেলেন তবে বন্ধ্যাত্ব হওয়ার আশঙ্কাও থাকে মেয়েদের ক্ষেত্রে।

রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে আপনার শরীরে তুলসী পাতা অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে। কারণ তুলসী পাতা শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট করে দেয় এ কারণে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা। আপনার শরীরের যদি কোন সার্জারির প্রয়োজন হয় তবে অবশ্যই দুই সপ্তাহ আগে থেকে আপনি তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধ করে দেবেন।

এছাড়াও তুলসীপাতায় থাকে অতিরিক্ত পরিমাণে পটাশিয়াম ফলে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে তাই কারো যদি নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকে তবে তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো সে ক্ষেত্রে সতর্ক থাকলে তুলসী পাতা খাওয়া নিরাপদ এগুলো ছাড়া আপনি সকল উপকারিতা পাবেন তুলসী পাতা থেকে।

শীতকালে আদা ও তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতাঃ

শীতকালে প্রতিদিন সকালে আপনি যদি আদাও তুলসী পাতা খেতে পারেন তবে আপনার শরীরে নানা রকম রোগ থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক শীতকালে আদাও তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা গুলো-

হজমে সাহায্য করেঃ

শীতকালে আমাদের খাবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হজম হয় না পেট ভারী হয়ে থাকে। এর প্রতিকার হিসেবে আপনি যদি প্রতিদিন শীতকালে আদা ও তুলসী পাতা খান তবে আপনার হজমের কোন সমস্যায় থাকবে না। কারণ আদার রস হজমের এনটাইম গুলোকে উদযাপিত করতে সাহায্য করে হজম সহজ করে এবং পেট ভাপা প্রতিরোধ করে তোলে।

তুলসী একটি নিরাপদ ভেষজ উদ্ভিদ যা রক্তচাপ এবং লিপিড প্রোফাইল স্বাভাবিক করতে কাজ করে। সেজন্য আপনি যদি হজমের কোন সমস্যা না রাখতে চান আপনার শরীরে তবে আপনি শীতকালে নিয়মিতভাবে আদা ও তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

শরীরকে চাঙ্গা রাখেঃ

আদা খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ আদাতে রয়েছে থার্মো  জেনিক যা খেলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা উৎপন্ন হবে। ঠান্ডার মাছগুলোতে আপনি যদি আদা খেতে পারেন তবে আপনার শরীরকে অনেকটা উষ্ণ রাখবে এবং তুলসী রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।

শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করেঃ

শীতকালে আদা ও তুলসী পাতা আপনি যদি খেতে পারেন তবে আপনার শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। কারণ আদার রস আপনার স্লেশ মা পরিষ্কার করে এবং তুলসী শ্বাসনালীতে প্রদাহ কমায়। আপনি যদি নিয়মিতভাবে শীতকালের আদা অতুলসী পাতা খেতে পারেন তবে আপনার কাশি নাক বন্ধ এবং গলা চলা এগুলো থেকে মুক্তি পাবেন।

মৌসুমী রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ

আদার রস এন্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেন্টরি যৌগসমৃদ্ধ অন্যদিকে তুলসী তার ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত এই দুই উপাদান একসঙ্গে শীতকালীন অসুস্থতা যেমন সর্দি এবং ফ্লোর বিরুদ্ধে শক্তিশালী কাজ করে।২০২০ সালের প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে সাধারণ স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য এটি ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

উষ্ণতাঃ

আদাও তুলসী আপনি যদি শীতকালে প্রতিদিন খেতে পারেন তবে আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করবে। আদাও তুলসী নিয়মিত খেলে আপনার শরীরের শুধু তাপমাত্রা করবে না এটি যদি আপনি 
নিয়মিত খেতে পারেন তবে আপনার মানবদেহে তৎক্ষণিকভাবে শক্তি যোগাবে।


মুখের স্বাস্থ্যঃ

তুলশিতে একটি ম্যাকটোভিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা মুখের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে আপনি কি মুখের নানা রকম সমস্যায় ভুগছেন তবে তুলসী পানের দিয়ে বাড়ির স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারেন এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ কমাতেও এটা অত্যন্ত কার্যকরী।

শেষ কথাঃ শীতকালে আদাও তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, শীতকালে আদা ও তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে এর অপকারিতা ও রয়েছে।আদা উপকারী ভেবে আপনি যদি মাত্রা অতিরিক্ত আদা খেয়ে ফেলেন তবে আপনার হৃদ যন্ত্রের গতি বেড়ে যাওয়ার মত সমস্যা এবং দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা দেখা অনিদ্রায় ভোগা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে আপনার শরীরে। 

আবার তুলসী পাতার উপকারিতা রয়েছে অনেক যেটা আমরা সকলেই জানি আপনি যদি তুলসী পাতা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তবে তুলসী পাতা আপনার শরীরের মারাত্মক সব রোগ যেমন- ক্যান্সার,ডায়াবেটিস,হৃদরোগ ইত্যাদির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে। 

প্রিয়পাঠক বন্ধুরা, এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা পড়েছেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে। 

তবে অবশ্যই আপনার মহামূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন যাতে করে আমরা সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url