গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আরো পড়ুনঃ পায়ের পেশিতে ব্যথা কারণ - পায়ের মাংস পেশিতে ব্যথা
যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারী। তবে, তরমুজ যে শুধু আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তাকিন্তু নয়, এটি অধিক পরিমাণে খেলে কিছু অপকারিতাও রয়েছে, যা আমাদের জানা প্রয়োজন। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক, তরমুজ খাওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-
তরমুজে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান
তরমুজে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিগুণ এবং উপাদান, যা মানুষের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এর মধ্যে থেকে নিম্নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য উপাদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করে হলো-
- পানি- তরমুজে প্রায় পানি রয়েছে ৯২%, যা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
- ফাইবার- অল্প পরিমাণে থাকে, (যা প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৪ বা .০.৬ গ্রাম), হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
- কার্বোহাইড্রেট- ৭/৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে। যা অল্প সময়ে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
- প্রাকৃতিক চিনি- তরমুজে ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ নামক প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে, যা মিষ্টি স্বাদের পাশাপাশি দ্রুত শক্তি যোগায়।
- ভিটামিন- তরমুজে কয়েক ধরণের ভিটামিন পাওয়া যায়। যেমন-
- ভিটামিন সি- যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন এ বা বিটা ক্যারোটিন- যা চোখের জন্য অত্যান্ত উপকারী।
- ভিটামিন বি৬- যা উন্নত করে মেটাবলিজম এবং মস্তিস্কের কার্যকরীতা।
- খনিজ উপাদান- তরমুজে যে যে খনিজ উপাদান পাওয়া যায় তা হলো-
- পটাশিয়াম- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- ম্যাগনেসিয়াম- পেশির কার্যকরীতা এবং হার্টের জন্য ভালো।
- অ্যান্টি অক্সিডেন্ট- তরমুজে পাওয়া যায় উন্নত মানের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যেমন-
- লাইকোপিন- যা হৃদরোগ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- সিট্রুলিন- রক্তচাপ কমাতে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে।
- প্রোটিন ও ফ্যাট- প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে .০.৬ বা০.৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে যা পরিমাণে খুবই কম এবং চর্বি প্রতি ১০০ গ্রামে ০.২ বা ০.৪ গ্রাম থাকে।
গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
তরমুজ বাংলাদেশের অন্যতম একটি সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় ফল, আর এই ফলটি সাধারণত গ্রীস্মকালে পাওয়া যায়। তবে, বর্তমানে আধুনিক চাষাবাদের কারণে প্রায়, সারা বছরই উতপাদন করা সম্ভাব হচ্ছে। এই উপকারী ফলটি আকারে অনেকটা বড়।
তরমুজে পাওয়া যায় প্রায় ৯২% জল, যা খেলে শরীরকে প্রশান্তি দেয়। তাছাড়া, তরমুজ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, কারণ এতে ভিটামিন "এ, সি" এবং অ্যান্টি অক্সিদেন্ট থাকে। তাই গরমের দিনে তরমুজ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকার পাশাপাশি দূর হয় পানি শূণ্যতা। নিম্নে তরমুজের উপকারিতা দেখুন-
** শরীর হাইড্রেট রাখে- তরমুজে পাওয়া যায় প্রায় ৯২% পানি, যা শরীরকে পানি শূণ্যতা থেকে রক্ষা করে। প্রচন্ড গরমের শরীর থেকে ঘামের কারণে যে পানি বের হয়ে যায়, তা পূরণ করতে তরমুজ খুবই উপকারী।
** ঠান্ডা অনুভূতি দেয়- তরমুজে যেহেতু প্রচুর পানি থাকে, তাই এর প্রাকৃতিক শর্করা শরীরকে শীতল অনুভূতি দেয়, যা প্রচন্ড গরমে সস্তি এনে দেয়।
** শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে- তরমুজে থাকে অধিক জলীয় অংশ, যা শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রাকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং ঝুকি কমায় হিট স্ট্রোকের।
** স্বাস্থ্য ভালো রাখে হৃদযন্ত্রের- তরমুজে লাইকোপিন নামক যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে তা হৃতযন্ত্রের জন্য উপকারী। এটি যেমন কোলেস্টেরলের মাত্র সঠিক রাখে তেমনি ঝুকি কমায় হৃদযন্ত্রের।
** হজম শক্তিকে করে উন্নত- তরমুজে পাওয়া যায় উন্নত মানের ফাইবার, যা হজম শক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং প্রতিরোধ করে কোষ্ঠকাঠিন্য।
** উন্নত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- তরমুজে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং প্রতিরোধ করে সংক্রমণ।
** কিডনি ভালো রাখে- তরমুজে থাকা উচ্চ জলীয় উপাদান এবং পটাশিয়াম সাহায্য করে কিডনির কার্যকরীতাকে উন্নত করতে এবং সহজ করে বর্জ্য পরিশোধন প্রক্রিয়া।
আরো পড়ুনঃ কিডনি ভালো আছে কিনা কিভাবে বুঝবেন
** পেশির ব্যাথা কমায়- তরমুজে পাওয়া যায় অ্যামিনো এসিড সিট্রুলিন, যা সাহায্য করে পেশির ব্যাথা কমাতে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ব্যায়ামের পর শরীর পুনরুদ্ধারে।
** সাহায্য করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে- তরমুজে থাকা পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
** ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায়- তরমুজের মধ্যে থাকা ভিটামিন "এ এবং সি" ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। কারণ, এটি ত্বকের আর্দ্রতাকে ধরে রাখে এবং প্রতিরোধ করে ব্রণ ও ফুসকুড়ি।
গরমে তরমুজ খাওয়ার অপকারিতা
তরমুজ যদিও, অনেক উপকারী ফল, কিন্তু এটি অধিক পরিমাণে খাওয়ার কারণে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, যদিও পরিমাণে অনেক কম। নিম্নে গরমে তরমুজ খাওয়ায় ওপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
** শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি- তরমুজে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ) অনেক বেশি পরিমাণে, যা অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের এই ফল খম খাওয়া উচিত।
** কিডনির উপর চাপ- তরমুজে থাকে প্রচুর পানি এবং পটাশিয়াম, যা অতিরিক্ত গ্রহন করার কারণে, কিডনির উপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে। তাই, কিডনির সমস্যার রোগীদের এই ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধনা অবলম্বন করা উচিত।
** ওজন বাড়তে পারে- তরমুজে যদিও ক্যালোরি অনেক কম থাকে, কিন্তু এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট এবং চিনি ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষ করে রাতের বেলা তরমুজ খেলে শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমতে পারে।
** রক্তচাও কমতে পারে- তরমুজে থাকা উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কমে যেতে পারে। ফলে মাথা ঘোরা এবং দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।
** অ্যালার্জির সমস্যা- তরমুজে কিছু উপাদান রয়েছে, যা অনেক মানুষের অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। এতে দেখা দিতে পারে ফোলা, চুলকানি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা।
** হজমের সমস্যা- অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খাওয়ার কারণে দেখা দিতে পারে পেট ফাঁপা ভাব, গ্যাস এবং ডায়রিয়া হতে পারে, বিশেষ করে যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে।
তরমুজ খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- পরিমিত পরিমাণে তরমুজ প্রতিদিন খাওয়া উচিত।
- প্রিজারভেটিভ ও রাসায়নিক মিশ্রিত তরমুজ এড়িয়ে চলা উচিত।
- ডায়াবেটসে যারা ভোগছেন, তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তরমুজ খাবেন।
- খাওয়ার পর বা ভরাপেটে তরমুজ না খাওয়াই ভালো, কারণ এতে হজমের সমস্যা হয়।
- রাতে খুব বেশি পরিমাণে তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে হজমের সমস্যা পারে।
তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা
তরমুজ গ্রীস্মকালের এক অনন্য সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল। এই উপকারী ফলটি যেমন গরমে ক্লান্তি দূর করে, তেমনি এই ফলটি শরীরকে রাখে হাইড্রেট এবং শরীরে সরবরাহ করে বিভিন্ন ধরণে পুষ্টি উপদান।
তরমুজ যে একটি অনেক উপকারী ফল, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে, অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে অনেক সময় শরীরিক কিছু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই, সঠিক নিয়ম এবং পরিমিত মাত্রায় তরমুজ খেলে এটি শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারী।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আশাকরি আপনারা আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়েছেন এবং যেনে গেছেন গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম এবং পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে অনেক তথ্য।
আরো পড়ুনঃ গলায় মাছের কাটা বিধলে তা দূর করার ১০ টি উপায়
আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারী বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভূলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url