সফটওয়্যার কি?- সফটওয়্যাত কত প্রকার- সফটওয়্যার কি কাজে ব্যবহার হয়

আরো পড়ুনঃ কম্পিউটার শেখার মাধ্যমে কিভাবে ক্যারিয়ার তৈরি করবেন

বর্তমান এই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মূল চালিকা শক্তি হলো সফটওয়্যার, যা পরিচালনা করে ডিজিটাল ডিভাইজ ও কম্পিউটারকে। এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অফিস ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা, বিনোদন, যোগাযোগ ইত্যাদিতে।

অপেরেটিং সিস্টেম থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার কাজ সহজ করে দেয় ব্যবহারকারীদের এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করে কার্যপ্রণালী। তাছাড়া, সফটওয়্যার ডাটা বিশ্লেশন, ডেভলপমেন্ট, নিরাপত্তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অদূর ভবিষ্যতে সফটওয়্যার তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নকে আরো এগিয়ে নিবে। তাই, অনেকে যানতে চান, সফটওয়্যার কি,  কতো প্রকার এবং এর কাজ সম্পর্কে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন দেখে নেই- 

সফটওয়্যার কি- What is software?

সফটওয়্যার হলো বিশেষ এক ধরণের ডিজিটাল প্রোগ্রাম বা নির্দেশনা, যা কম্পিউটার বা অন্য যে কোন ইলেক্ট্রিক ডিভাইজকে নির্দিষ্ট কোন কাজ সম্পাদন করতে সাহায্য করে। এটি মূলত হার্ডওয়্যারের বিপরীত, যা কম্পিউটারের অন্যতম শারীরিক অংশ।

সফটওয়্যার কম্পিউটারের প্রসেসর এবং অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে। সফটওয়্যার প্রধানত তৈরী হয় কোডের মাধ্যমে, যা কম্পিউটার পড়তে এবং বুঝতে পারে।

তাছাড়া, এটি খুব সহজে ব্যবহারকারীর সঙ্গে অতোপ্রতোভাবে মিশে জেতে পারে এবং বিভিন্ন প্রকারে অ্যাপ্লিকেশন টুলস চালাতে পারে।

সফটওয়্যার কত প্রকার?- What are the types of software?

সফটওয়ারকে মূলত প্রধান দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যেমন, সিস্টেম সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার। সিস্টেম সফটওয়্যার কম্পিউটার পরিচালনা করে এবং অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট কোন কাজ সম্পাদন করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, আরো কিছু উপশ্রেণীর সফটওয়্যার রয়েছে যেমন, ডেভলপমেন্ট সফটওয়্যার এবং মালওয়্যার সফটওয়্যার। ডেভলপমেন্ট সফটওয়্যার প্রোগ্রাম তৈরিতে সাহায্য করে এবং মালওয়্যার সফটওয়্যার ক্ষতিকর, যা কম্পিউটারের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে।

সিস্টেম সফটওয়্যার কি- What is system software?

সিস্টেম সফটওয়্যার হলো এমন বিশেষ এক ধরণের সফটওয়্যার, যা হার্ডওয়্যার এবং অন্য সকল সফটওয়্যারকে পরিচালনায় সাহায্য করে। এই সফটওয়্যারটি মুলত কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ কার্যকর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার পরিচালনার জন্য উপজুক্ত পরিবেশ তৈরী করে।

সিস্টেম সফটওয়্যরের কয়েকটি উপাদান রয়েছে, নিম্নের আলোচনা থেকে সিস্টেম সফটওয়্যারের উপাদান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

অপারেটিং সিস্টেম- Operating system

অপারেটিং সিস্টেম মূলত কম্পিউটারের প্রধান সফটওয়্যার, যা অন্য যে কোন প্রোগ্রাম চালাতে সাহায্য করে। এটি হার্ডওয়্যার এবং ব্যবহারকারীর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। যেমন- Windows, macOS, Linux,  Android, iOS ইত্যাদি।

ড্রাইভার সফটওয়্যার- Driver Software

ড্রাইভার সফটওয়্যার হল বিশেষ এক ধরণের প্রোগ্রাম, হারডওয়্যার ডিভাইসগুলোর সঙ্গে অপারেটিং সিস্টেমের যোগাযোগ স্থাপন করে। যেমন- গ্রাফিক্স ড্রাইভার, প্রিন্টার ড্রাইভার, সাউন্ড ড্রাইভার ইত্যাদি।

ইউটিলিটি সফটওয়্যার- Utility Software

ইউটিলিটি সফটওয়্যার মুলত সিস্টেমের পারফরম্যান্সকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। যেমন- ডিস্ক ক্লিনার, অ্যান্টিভাইরাস, ব্যাকআপ সফটওয়্যার ইত্যাদি।

অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার- Application Software-

অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার মূলত ব্যবহারকারীদের কাজে সাহায্যকারী একটি বিশেষ প্রোগ্রাম। এটি সফটওয়্যারের উপর কাজ করে এবং ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের বিভিন্ন ধরণের সুবধা প্রদান করে।

অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের কয়কটি প্রকারভেদ রয়েছে, নিম্নের আলোচনা থেকে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যার- Productivity Software

প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যারটি মূলত অফিসিয়াল এবং ব্যক্তিগত কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন- Microsoft Office ( Excel, word, Power point), Google Docs, Adobe Acrobat ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ adobe after effects কোন ধরনের সফটওয়্যার  

মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার- Multimedia Software

মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার মূলত ব্যবহার করা হয়ে থাকে, বিভিন্ন ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি কাজ পরিচালনা এবং সম্পাদন করার ক্ষেত্রে। যেমন- Adobe Photoshop, VLC Media, Final Cut Pro ইত্যাদি। 

কমিউনিকেশন সফটওয়্যার- Communication Software

এই সফটওয়্যারটি মূলত ইন্টারনেট বা নেটওয়ার্কের সংযোগ স্থাপনের কাজ করতে সাহায্য করে থাকে। যেমন- Zoom, Skype, WhatsApp ইত্যাদি।

ওয়েব ব্রাউজার- Web Browser

ওয়েব ব্রাউজার সফটওয়্যারটি মূলত ইন্টারনেট ব্রাউজ করার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন- Google Chrome, Mozilla, Firefox, Safari, Microsoft Edge ইত্যাদি। 

এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার- Enterprise Software

বড় কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার ব্যবস্থাপনার কাজকে আরো সহজ করার জন্য, এই ধরণের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন- ERP সফটওয়্যার (SAP, Oracle ERP), CRM সফটওয়্যার (Salesforce, HubSpot) ইত্যাদি।

গেমিং সফটওয়্যার- Gaming Software

গেমিং সফটওয়্যার মূলত ব্যবহার হয়ে থাকে বিনোদনের জন্য এবং বিভিন্ন ধরণের ভিডিও গেম চালাতে সাহায্য করার জন্য। যেমন- PUBG, FIFA, Call of Duty, Minecraft ইত্যাদি।

ডেভেলপমেন্ট সফটওয়্যার- Development Software

ডেভেলপমেন্ট সফটওয়্যার মূলত ব্যবহার করা হয়ে থাকে, ডেভেলপারদের বিভিন্ন ধরণের প্রোগ্রাম তৈরির করার জন্য। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গয়েজ ও আইডিই (Integrated Development Environment- IDE) প্রোগ্রামের লেখার জন্য ভিবিন্ন ল্যাঙ্গুয়েজ ও টুল ব্যবহার করা হয়। যেমন- Python, Java, C++, Code, Eclipse, Visual Studio, Android Studio ইত্যাদি।

ডাটাবেস সফটওয়্যার- Database Software

এই ধরণের সফটওয়্যার মূলত ব্যবহার করা হয়ে থাকে তথ্য সংরক্ষণ এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে। যেমন- MySQL, Oracle Database, Server, Microsoft, Mongo BD  ইত্যাদি।

মালওয়্যার সফটওয়্যার- Malicious Software

মালওয়্যার সফটওয়্যার হল একটি ক্ষতিকর সফটওয়্যার, যা কম্পিউটারের নিরাপত্তাকে বিভিন্নভাবে বিঘ্নিত করে। মালওয়্যার সফটওয়্যারের কয়কটি প্রকারভেদ রয়েছে, নিম্নের আলোচনা থেকে মালওয়্যার সফটওয়্যারের প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

ভাইরাস- Virus

স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং কম্পিউটারের বিভিন্ন ক্ষতি করে।

ওয়ার্ম- Worm

এটি নিজে নিজে কপি হয় এবং কম্পিউটারের বিভিন্ন সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ে।

ট্রোজান- Trojan Horse

এটি নির্দোষ সফটওয়ার হিসাবে কম্পিউটারের ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং কম্পিউটারের ক্ষতি করে।

র্যানসমওয়্যার- Ransomware

এটি একটি ভংকর সফটওয়্যার, যা ব্যবহারকারীর বিভিন্ন তথ্য এনক্রিপ্ট করে এবং মুক্তিপন দাবি করে।

সফটওয়্যার কি কাজে ব্যবহার হয়- What software is used?

সফটওয়্যার বিভিন্ন ধরণের কা্জ সম্পাদন করে থাকে, যেমন- তথ্য সংগ্রহ, যোগাযোগ, শিক্ষা, ব্যাংকিং, অনলাইনে কেনা কাটা, বিনোদন, স্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদি। এটি প্রযুক্তির মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারকারীর দক্ষতা, শ্বাচ্ছন্দ এবং উন্নতি এনে দেয়।

যা মানব জীবনের নানান ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, সফটওয়্যারের মাধ্যমে সাধারণত যে সকল কাজ সম্পাদন করা যায়, তা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

  • কম্পিউটার পরিচালনা- কম্পিউটার চালাতে অপারেটিং সিস্টেম সাহায্য করে।
  • যোগাযোগ ব্যবস্থা- মেসেজিং অ্যাপ, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে যোগাযোগ সহজ করে।
  •  ডাটা বিশ্লেষণ ও ব্যবস্যাপনা- Excel, SQL ডাটাবেস বিশ্লেষণে ব্যবহার করা হয়।
  • বিনোদন- ভিডিও, গেম, মিউজিক ইত্যাদিতে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।
  • প্রোগ্রামিং ও ডেভেলপমেন্ট- সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য বিভিন্ন কোডিং প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা হয়।

সফটওয়্যার কার্যকরীতা- শেষকথা

সফটওয়্যার আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মূল চালিকা শক্তি। এরফলে মানুষের জীবন অনেক সহজ, কার্যকর এবং স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ধরণের সফটওয়্যার মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), মেশিন লার্নিং এবং ক্লাউড কম্পিউটিং আরো উন্নত সফটওয়্যারের জন্ম দেবে, যা আমাদের মানুষের জীবনকে আরো সহজ এবং গতিশীল করবে।

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি, সফটওয়্যার কি?- সফটওয়্যাত কত প্রকার ও কি কি?- সফটওয়্যার কি কাজে ব্যবহার হয়" এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

আরো পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধুর লেখা প্রথম বইটির নাম কি

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url