চুল ভালো রাখতে কার্যকরী সহজ ১০ ঘরোয়া উপায়- চুলের যত্নে কার্যকরী প্রাকৃতিক উপায়

আরো পড়ুনঃ সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর জীবন পেতে ৭ সহজ উপায় 

মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ চুল। তাই, সকলের কাম্য স্বাস্থ্য উজ্জল, ঝলমলে ঘন কালো চুল। কিন্তু এখন সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে, দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস ও জীবনযাপন এবং স্ট্রেসের কারণে চুল পড়া, রুক্ষতা এবং চুলের আগাফাটা।

বর্তমানে চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য বাজারে পাওয়া যায়, বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যালযুক্ত পণ্য, যেগুলো বেশিরভাগ সময় কার্যকর হয় না, উল্টো ক্ষতির সম্ভবনা বেড়ে যায়। তাই, অনেকেই ব্যবহার করতে শুরু করেছেন, প্রাকৃতিক পণ্যের তৈরী ঘরোয়া উপাদান।

তবে, এইসকল ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপাদান চুলের সমস্যা অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, "চুল ভালো রাখতে কার্যকরী সহজ ১০ ঘরোয়া উপায়" সম্পর্কে। যা, অনুসরণ করলে চুল থাকবে সবাস্থ্যবান, সুন্দর ও প্রাণবন্ত। চলুন তাহলে দেখি- 

চুলের রুক্ষতা দূর করতে নারকেলের তেল- Coconut oil to remove hair roughness

চুলের পরিচর্যায় নারকেল তেলের ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসছে। নারকেল তেলে পাওয়া যায় ভিটামিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড, যা চুলের রুক্ষতা দূর করে, চুলের গোড়া করে মজবুত এবং চুলে যোগায় প্রাকৃতিক সাইন। তাছাড়া, এটি চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

চুলের রুক্ষতা দূর করতে নারকেল তেল ব্যবহার পদ্ধতি- How to use coconut oil to remove hair roughness

কুসুম গরম নারকেল তেল প্রতি সপ্তাহে ২/৩ বার ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন স্ক্যাল্পে। একঘন্টা রাখার পর হালকা স্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। আবার আপনি চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করে, সকালে ধুয়ে ফেলতে পারেন, এতে তেলটি আরো ভালো কাজ করতে পারে।

চুলের গোড়া মজবুত করতে পেঁয়াজের রস- Onion juice to strengthen hair roots

পেয়াজে পাওয়া যায় সালফার, যা চুলের গোড়া মজবুত করে এবং সাহায্য করে নতুন চুল গজাতে। তাছাড়া, এটি স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর মাধ্যমে নিশ্চিত করে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে। আবার পেঁয়াজে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, সাহায্য করে স্ক্যাল্পের ইনফেকশন রোধে।

চুলের গোড়া মজবুত করতে পেয়াজের রস ব্যবহার পদ্ধতি- How to use onion juice to strengthen hair roots

প্রথমে মাঝারি আকারের একটি পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে রস ছেকে নিন। এবার রস কটনের সাহায্যে স্ক্যাল্পে লাগান এবং ক্যাসাজ করুন হালকাভাবে। ২৫/৩০ মিনিটের মত অপেক্ষা করার পর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন, হালকা কোন শ্যাম্প ব্যবহার করে।

যদিও, এর গন্ধ শুরুর দিকে অসহ্য মনে হতে পারে, কিন্তু কয়েকবার নিয়মিত ব্যবহার করলে, তা সহনীয় হয়ে যাবে। এই পদ্ধতিটি প্রতি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করলে, ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

অতিরিক্ত চুলপড়া রোধে মেথি বীজ- Fenugreek seeds to treat excessive hair loss

মেথি বীজে প্রাক্রিতিকভাবে পাওয়া যায় প্রোটিন, লেসিথিন এবং নিকোটিনিক অ্যাসিড। তাই, মেথি বীজ ব্যবহারে চুলের গোড়া মজবুত করার পাশাপাশি অতিরিক্ত চুল পড়া রোধে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি চুলের রুক্ষতা ও খুসকি কমিয়ে চুলের বৃদ্ধিকে তরান্বিত করে।

চুল পড়া রোধে মেথি বীজের ব্যবহার পদ্ধতি- How to use fenugreek seeds to prevent hair loss

রাতে ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ভেজানো বীজ পেস্ট করে চুলে ও স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগান। ৩৫/৪০ মিনিটের মত অপেক্ষা করার পর, ভালো করে ধুয়ে ফেলুন, হালকা কোন শ্যাম্প ব্যবহার করে।

এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারে চুলে আনে প্রাকৃতিক মসৃণতা এবং বাড়ায় চুলের ঘনত্ব। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এটি প্রতি সপ্তাহে ১বার ব্যবহার করুন।

কোমল মসৃণ চুল পেতে অ্যালোভেরা জেল- Aloe vera gel for soft and smooth hair

প্রাক্রিতিকভাবে চুলের রুক্ষতা কমায় অ্যালোভেরা, স্ক্যাল্পে শিতলতা ফিরিয়ে এনে চুল রাখে কোমল মসৃণ। তাছাড়া, এতে থাকা অ্যান্টিফাংগাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, চুলকে খুসকিমুক্ত করতে অনেক কার্যকর। আবার এটি চুলের ভিঙ্গুরতা কমিয়ে চুলকে করে শক্তিশালী।

কোমল মসৃণ চুল পেতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার পদ্ধতি- How to use aloe vera gel to get soft and smooth hair

পরিস্কার অ্যালোভেরার পাতা কেটে এর জেল বের করুন। চুলে এবং স্ক্যাল্পে সুন্দর করে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। ২৫/৪০ মিনিটের মত অপেক্ষা করার পর, হালকা কোন শ্যাম্প দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে চুল নরম, ঘন ও উজ্জল হবে। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ১/৩ বার ব্যবহার করুন।

চুলে প্রোটিন যোগাতে ডিমের হেয়ার প্যাক- Egg hair pack to add protein to hair

দুর্দান্ত প্রাকৃতিক একটি কন্ডিশনার ডিম, যা চুলে প্রোটিনের ঘাটতি মেটায়। ডিমের মধ্যে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল মজবুত করে চুলের গোড়া, সাইন বাড়ায় এবং দূর করে রুক্ষতা। তাই, ডিমের প্যাক নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুল হবে নরম-কমল, ঘন-কালো এবং প্রাণবন্ত।

চুলে প্রোটিন যোগাতে ডিমের হেয়ার প্যাক ব্যবহার পদ্ধতি- How to use egg hair pack to add protein to hair

একটি ডিম ভেঙ্গে এর পুরো অংশ (সাদা ও কুসুম) ভালোকরে ফেটিয়ে এর সঙ্গে ১ চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ২৫/৩০ মিনিট অপেক্ষা করে, হালকা ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিস্কার করুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে ১বার ব্যবহার করলেই ভালো একটা ফলাফল পাওয়া যাবে।

চুল ঘন কালো করতে আমলকি- Amla powder to make hair thick and black

প্রাকৃতিকভাবে চুল কালো, ঘন ও হাস্যউজ্জল রাখতে আমলকি সাহায্য করে। কারণ, আমলকিতে রয়েছে, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা চুলের গোড়া মজবুত এবং চুল পড়া কমায়। এছাড়া এটি চুলের অকাল পক্কতা রোধে কার্যকরী।

চুল ঘন কালো করতে আমলকি ব্যবহার পদ্ধতি- How to use Amla to make hair thick and black

২/৩ চামচ আমলকির শুকনো পাউডারের সঙ্গে পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার আপনার তৈরী পেস্ট স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগানোর ৩৫/৪০ মিনিট পর, হালকা কোন শ্যাম্প ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন।

তবে, এর সঙ্গে হেনা বা শিকাকাই মিশিয়ে প্যাক তৈরী এবং ব্যবহার করলে আরো কার্যকর হবে। এই প্যাকট সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করলেই চুলের উন্নতি হবে উল্লেখযোগ্য হারে।

স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে হট অয়েল থেরাপি- Hot oil therapy to increase blood circulation to the scalp

চুলের জন্য হট অয়েল থেরাপি অত্যান্ত উপকারি একটি ঘরোয়া পদ্ধতি। কারণ, তেল হালকা গরম করে চুলে লাগালে, তা সহজেই স্ক্যাল্পে প্রবেশ করে এবং পুস্টি পৌছায় চুলের শিকড় পর্যন্ত। এটি ব্যবহারে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, চুলের রুক্ষতা কমে এবং ত্বরান্বিত হয় চুলের বৃদ্ধি।

চুলে হট অয়েল থেরাপি ব্যবহার পদ্ধতি- How to use hot oil therapy on hair

প্রথমে নারকেল, অলিভ বা ক্যাস্ট্র অয়েল হালকা গরম করুন। এবার আঙ্গুলের সাহায্য আস্তে আস্তে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন এবং পুরো চুলে লাগান। এটি ব্যবহারের পর ১ ঘন্টার মত মাথা ঢেকে রাখুন। চাইলে গরম তোয়াল দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন। এবার হালকা শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন, এটি সপ্তাহে ১/২ বার ব্যবহার করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

চুল চকচকে উজ্জল করতে ভিনেগার- Vinegar to make hair shiny and bright

প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার অত্যান্ত কার্যকর। এটি ব্যবহারে স্ক্যাল্পের অতিরিক্ত তেল, ধুলা ও প্রোডাক্ট বিল্ডআপ দূর করার মাধ্যমে, চুলকে হালকা, মসৃণ এবং চকচকে করে তোলে। তাছাড়া, এটি সঠিক রাখতে সাহায্য করে pH এর ব্যালেন্স।

চুল চকচকে উজ্জল করতে ভিনেগার ব্যবহার পদ্ধতি- How to use vinegar to make hair shiny and bright

২ চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের সঙ্গে পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। শ্যাম্পু করার পর মিশ্রণটি আস্তে আস্তে চুলে ঢালুন এবং স্ক্যাল্পে হালকা ম্যাসাজ করুন। ২/৩ মিনিট রাখার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ১বার ব্যবহার করলেই চুল হবে সাইন ও সফটনেস।

খুসকি মুক্ত চুলের জন্য হেনা প্যাক- Henna pack for dandruff-free hair

হেনা যদিও, চুলের প্রাকৃতিক রঙ হিসাবে অধিক পরিচিত, তবে এটি চুলের ঘনত্ব বাড়াতে এবং স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। হেনা ব্যবহারে চুল হয়ে উঠবে শক্ত মজবুত, মসৃণ এবং খুশকি মুক্ত।

খুসকি মুক্ত চুলের জন্য হেনা প্যাক ব্যবহার পদ্ধতি- How to use henna pack for proper hair growth

হেনা পাউডার ২ চামচ, আমলকি পাউড়ার ১ চামচ, মেথি পেস্ট, ১টি ডিম ও টক দই ১ চামচ মশিয়ে নিন। এবার সকল উপকরণ ভিজিয়ে রাখুন ৫/৬ ঘন্টা। এরপর চুলে ১ ঘন্টা লাগিয়ে রাখার পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি মাসে ২ বার ব্যবহারে চুল হবে মজবুত, ঘন-কালো এবং হাস্যউজ্জল।

চুল ভালো রাখতে সঠিক খাদ্যাভাস- Proper diet to maintain good hair

কেবলমাত্র বাহ্যিক যত্ন নয়, চুল ভালো রাখতে হলে, ভেতর থেকে পুষ্টি দেওয়া অত্যান্ত জরুরি। সঠিক খাদ্যাভাস চুলের গঠনকে যেমন মজবুত করে, তেমনি চুল পড়া রোধে সাহায্য করে। 

চুল ভালো রাখতে যে খাবার খাবেন- Foods to eat to keep your hair healthy

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনজুক্ত খাবার, যেমন ডিম, দুধ, ডাল, মাছ এবং বাদাম। এছাড়াও, A, B C ভিটামিনজুক্ত খাবার, যেমন ফল, শাকসবজি এবং আয়রণ চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

তাছাড়া, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে চুলের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। মোট কথা হলো সুস্থ চুল পাওয়ার জন্য বাইরের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি শরীরের ভিতরের যত্ন নেওয়া উচিত। 

চুলের যত্নে সহজ উপায়- শেষকথাঃ Easy ways to care for hair - Final Thoughts

প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বনে চুলের ক্ষতি কম হয় এবং ভালো ফল পাওয়া যায় দীর্ঘমেয়াদিন। তবে, ধৈর্যের সঙ্গে নিয়মিত চর্চাই হল মূল চাবিকাঠি। আপনি বাড়িতে বসে সহজেই এই উপায়গুলো অনুসরণে চুলের যত্ন নিতে পারবেন। তাও আবার প্রাকৃতিক ও নিরাপদভাবে।

তবে, ঘরোয়া উপায় শুরুর প্রথমে স্ক্যাপ পরীক্ষা করা ভালো, কারণ সকলের ত্বক এক ধরণের নয়। তাছাড়া, অতিরিক্ত চুল পড়া, হতে পারে বড় ধরণের কোন সমস্যা, সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি, "চুল ভালো রাখতে কার্যকরী সহজ ১০ ঘরোয়া উপায়" সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।

আরো পড়ুনঃ আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - আমড়ার পুষ্টিগুণ

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি আপনার পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করবেন, যাতে তারাও উপকৃত হন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url