সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর জীবন পেতে ৭ সহজ উপায়

আরো পড়ুনঃ স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - গর্ভাবস্থায় স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা

হাজারো কর্ম ব্যবস্থাতার মাঝে সবাই চায়, একটি সুন্দর সুশৃঙ্খল এবং স্বাস্থ্যকর জীবিন যাপন। কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো, কাজের চাপ, সময়ের অভাব এবং আমরা অনেকেই প্রযুক্তি নির্ভর জীবনের কারণে, নিজের প্রতি নজর দিতে পারি না।

অথচ আমরা যদি একটু সচেতনতার সঙ্গে সহজ কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের জীবনকে করে তুলতে পারি, আরো অনেক বেশি প্রশান্তিময়, প্রাণবন্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মত, যা আমাদের সকলরই কাম্য।

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, এমন কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়, যা প্রতিদিনের জীবনযাপনে প্রয়োগ করতে পারলে আমরা গড়তে পারবো, উন্নত পরিপাটি এবং সুখকর জীবন। তাহলে চলুন দেখি-

সময়মত ঘুমানো এবং ঘুম থেকে ওঠা- Going to bed and waking up on time

স্বাস্থ্যকর জীবন গড়ার প্রথম একটি ভিত্তিই হলো রুটিন করে ঘুমানো। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস শুধুমাত্র যে, শরীরের উপর প্রভাব ফেলে, তানয় এটি মনেও ফেলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ঘুম দরকার ৭/৮ ঘন্টা।

ঘুম যেমন শরীরের ক্লান্তি দূর করে, তেমনি সতেজ রাখে মস্তিস্ককে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রাতে দেরি করে ঘুমানো, ল্যাপটপ বা মোবাইলে সময় নষ্ট করা বা ঘুমের আগে অতিরিক্ত চা বা কপি পান করার অভ্যাস খারাপ প্রভাব ফেলে শরীরের উপর।

অপরদিকে ঘুমের আগে ধ্যান করা, বই পড়া ও আস্তে আস্তে ঘরের আলো কমিয়ে পরিবেশকে শান্ত করা ঘুমটা জন্য সাহায্য করে। ঘুম শুধুমাত্র আমাদের শরীরের বিশ্রামের জন্য নয়, বরং এটি আমাদের সারাদিনের কর্মশক্তি পুনরুদ্ধারের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।

পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া- Eat moderate and healthy foods

'তোমার খাবারই তোমার ওষুধ' এই নীতি কথাটি খুবই কার্যকর। আমরা যদি প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় পরিমিত ও সুষম খাবার না খাই, তাহলে আমাদের শরীরর পাশাপাশি মনও দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেকে আছে, যারা বিভিন্ন ব্যস্ততার কথা বলে বাজারের ফাস্ট ফুড, সফট ও ড্রিংকস ও চিনিযুক্ত খাবার খাই।

কিন্তু, আমরা স্মরণ করিনা যে, এই সকল খাবারের কারণে আমাদের শরীরে দানা বাধে বিভিন্ন রোগ, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। সুষম খাদ্য বলতে, আমরা খাদ্যে প্রোটিন, চরবি, কার্বো- হাইড্রেট, ভিটামিন এবং মিনারেলের অনুপাত সঠিক থাকাকে বুঝায়।

তাই, আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালকায় রাখা উচিত, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, বাদাম ও দুধ জাতীয় খাবার। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করাও খুবই জরুরি। কারণ, প্রতিদিন যদি ৭/৮ গ্লাস পানি পান করা যায় তাহলে, শরীর ডিটক্স হয় এবং ত্বক থাকে উজ্জল।

নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করা- Make a habit of regular exercise

আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য আমাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা প্রয়োজন। এটি হতে পারে হাটা, দৌড়ানো, সাইক্লিন, যোগ ব্যায়াম, বা বাসায় হালকা সাইক্লিন। ব্যায়াম কেবল  ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে না, হাড় মজবুত রাখে, মানসিক চাপ কমায় এবং হৃদযন্ত্রকে করে শক্তিশালী।

ব্যায়ামের অন্যতম বড় সুবিধা হলো, এটি আমাদের সস্তিস্কে "এন্ড্রফিন" নামক হরমন নিঃসরণ করে, যা সাহায্য করে মন ভালো রাখতে। তাই, যারা নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করেন, তারা মানসিক চাপ বা বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারেন।

এমনকি যারা, অফিসের কাজে বিভিন্ন ব্যস্ত জীবন কাটান, তারা চাইলে অফিসের সিড়ি ব্যবহার, হালকা হাঁটা চলা বা বসে বসেই অনেক সহজ ব্যায়াম আছে, সেগুলো করতে পারেন। মনে রাখতে হবে, শরীরের যত্ন নেওয়া মানেই নিজের প্রতি খেয়াল রাখা।

নিজেকে কিছুটা সময় দেওয়া- Give yourself some time

নিজেকে সময় দেওয়া এবং ভালোবাসার মানে এই নয় যে, আপনি একজন স্বার্থপর। এটি বরং নিজেকে মূল্য দেওয়া এবং নিজের ভালো থাকার দায়িত্ব নেওয়া। আপনি যদি নিজেকে সময় দিতে না পারেন, তাহলে অন্যকে সময় দেওয়া বা ভালোবাসা দেওয়াও অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

আরো পড়ুনঃ আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - আমড়ার পুষ্টিগুণ

আমাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫/৩০ মনিট সময় শুধু নিজের জন্য নিন। এই সময়ে আপনি নিজের পছন্দের কাজ করতে পারেন, যেমন চা বা কফি হাতে জানালার পাশে বসে থাকা, ডায়েরী লেখা, গান শোন, পেইন্টিং করা বা বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম বা ধ্যান করা।

এই সকল কাজের জন্য যেমন আমাদের আত্নবিশ্বাস বাড়বে, স্ট্রেস কমবে এবং নিজেকে আমরা আরো শক্তিশালী মানুষ হিসাবে অনুভব করতে পারবো।

ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা- Think positive

মন মানুষকে সফল করতে সাহায্য করে, আবার এই মনই মানুসকে দুর্বল করে দিতে পারে। তাই আমাদের চিন্তাধারার ইতিবাচকতা, জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিনের সকাল শুরু করুন কোন একটি পজেটিভ থট বা ধ্যান দিয়ে।

নিজের উদ্দেশ্যকে মনে করিয়ে দিন, আর নিজেকে বলুন "আমি পারবো, আমাকে পারতেই হবে।" নেতিবাচক মানুষ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন, সেই সঙ্গে আশেপাশের পরিবেশকেও ইতিবাচক রাখার চেস্টা করুন।

আপনার জীবনের ছোট সাফল্য হলেও তা উৎযাপন করুন, নিজে ভুল করলে তা ক্ষমা করুন এবং সবসময় নতুনভাবে শুরুর মানসিকতা রাখুন। কারণ, ইতিবাচিক চিন্তাভাবনা কেবল মানসিক শান্তি দেয় না। এটি আমাদের প্রতিদিনের কাজে আত্নবিশ্বাস ও শক্তি এনে দেয়।

সম্পর্ক রক্ষার প্রতি যত্ন নেওয়া- Taking care of relationships

মানুষ সামাজিক জীব, আর এই সমাজবদ্ধ জীবনের মূল চালিকা শক্তি হলো সম্পর্ক। মানসিক সুস্থতার জন্য পরিবার, বন্ধু- বান্ধব, আত্নীয় স্বজন ও প্রিয়জনদের সঙ্গে, সম্পর্ক ঠিক রাখা অত্যান্ত জরুরি। আমরা যান্ত্রিক জীবন বা ব্যস্ততার চাপে অনেক সময় ভুলে যাই প্রিয় মানুষদের।

কিন্তু এক মিনিট ফোন কল, একটি ম্যাসেজ বা একসঙ্গে এককাপ চা খাওয়ার কারণেও সম্পর্ককে আরো গভীর করে তোলা যায়। মন খুলে কথা বলা, অন্যের সমস্যায় পাশে থাকা এবং নিজে অপরকে সম্মান দেখানো, এই সকল সামান্য বিষয় সম্পর্ককে করে আরো মজবুত।

একটি বিষয় আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, যখন দেখবেন আপনার পাশে কেউ আছে, তখন দেখবেন, আপনার মানসিকতা অনেক বেড়ে যাবে এবং শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

ডিজিটাল ডিটক্স- Digital detox

বর্তমান সময়ে আমরা প্রায় সকলেই মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব ও টিভির সামনে বসে বসে সময় কাটাই। গেমিং, বিভিন্ন ভিডিও দেখা, সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং এবং অফিসের কাজ এসব কিছুই আমাদেরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পর্দার আড়ালের দিকে।

কারণ, অতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম আমাদের চোখ, ঘুম ও মনোযোগের প্রতি বিরূপ প্রভাব ফেলে। ডিজিটাল ডিটক্স বলতে, প্রতদিনের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, সকল প্রযুক্তি পণ্য থেকে দূরে থাকা। এই সময় আমরা চাইলে প্রকৃতির মাঝে হাঁটা, বই পড়া, গান শুনা বা সৃজনশীল কোন কাজ করতে পারি।

এতে আমাদের মন যেমন শান্ত হয়, আমাদের ফোকাস বাড়ে এবং নিজেদের মধ্যে বিশেষ এক ধরণের প্রশান্তি আসে। তাই ডিজিটাল ডিটক্স আমাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।

সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবন পেতে সহজ উপায়- শেষকথাঃ Easy ways to have a healthy and fit life

সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর জীবন মানে শুধুমাত্র বাহ্যিক ফিটনেস নয়, এটি আত্নবিশ্বাস, মানসিক প্রশান্তি, ভালো অভ্যাস ও সুস্থ সম্পর্কের এক মিলিত রূপ। আমাদের জীবন যে কতোটা অর্থবহ হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসের উপর।

উপরের ৭ সহজ উপায়, ঘুম, খাবার, ব্যায়াম, প্রযুক্তি থেকে বিরতি, নিজের যত্ন, ইতিবাচক মানসিকতা এবং সম্পর্কের উন্নয়ন আমাদের জীবনকে করে তুলতে পারে, অনেক সুশৃঙ্খলপ্রণবন্ত ও শান্তিময়। তাই, আসুন আমরা নিজেকে ভালোবাসি, নিজেকে গুরুত্ব দেই, গড়ে তুলি সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা।

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি, "সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর জীবন পেতে ৭ সহজ উপায়" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যা, অনুসরণ করে আপনাদের জীবন ধারায় অনেক পরিবর্তন এনে দেবে বলে আমরা আশাবাদী।

আরো পড়ুনঃ শীতকালে আদা ও তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন, যাতে অন্যরাও উপকৃত হন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url