অ্যালার্জি হওয়ার লক্ষণ কি?- অ্যালার্জি প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায়

অ্যালার্জি বর্তমানে পরিচিত একটি সমস্যা। কারণ, অ্যালার্জি অন্যতম একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিচিত এবং বন্ধু বা পরিবারের অনেকেই অ্যালার্জি সমস্যায় ভূগছেন এবং অ্যালার্জি সমস্যাটি সাধারণত বিভিন্ন উপাদনের কারণে হয়ে থাকে।
অনেক মানুষ আছেন, যাদের খাবারের কারণে, আবার অনেকের ধুলাবালি বা পশুর লোমের জন্য এই সমস্যায় পড়েন। তবে, আজকে আমরা জানব, অ্যালার্জি কি?, এটি হওয়ার কারণ, লক্ষণ এবং এটি প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। চলুন তাহলে আমরা নিম্নে দেখে নেই-

অ্যালার্জি কি ধরণের সমস্যা?- What kind of problem is allergy?

অ্যালার্জি ইমিউন সিস্টেমের অন্যতম এবং অস্বাভাবিক একটি প্রতিক্রিয়া, যা শরীরের অনেক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে দেয় নিরীহ কিছু উপাদানের বিরুদ্ধ। আর এগুলোকে বলা হয় অ্যালারজেন (Allergen), এবং এগুলোর প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে অ্যালার্জির লক্ষণ।
অ্যালার্জির সমস্যায় আক্রন্ত হলে সাধারণত ত্বকে দেখা দেয় র‍্যাশ, চোখে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা, নাক বন্ধ হওয়া এবং পানি পড়া ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয়। এটি ঘটে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অস্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য।

অ্যালার্জি হওয়ার লক্ষণ কি কি?- What are the symptoms of an allergy?

অ্যালার্জি হওয়ার লক্ষণ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, যা নির্ভর করে অ্যালারজেনের ধরণ অনুযায়ী। তবে, লক্ষণগুলির মধ্যে বেশি দেখা যায় হাঁচি, চোখে চুলকানি বা পানি পড়া, নাক বন্ধ হওয়া বা পানি পড়া, শ্বাস কষ্ট, ত্বকে র‍্যাশ, গলা খুসখুসে, পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া। নিম্নে লক্ষণগুলো দেখুন- 

  • বার বার হাঁচি আসা।
  • ত্বকে চুলকানি বা র‍্যাশ।'
  • কাশি এবং গলা খুসখুসে।
  • পেট ব্যথা, বমি ও ডায়রিয়া।
  • নাক বন্ধ ও নাক দিয়ে পানি পাড়া।
  • হাপানির অনুভূতি বা শ্বাস নিতে সমস্যা।

অ্যালার্জির বিশেষ সতর্কতা- Special Allergy Precautions

অ্যালার্জি অনেক সময় মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, কারণ এটি সৃষ্টি করতে পারে Anaphylaxis (অ্যানাফাইল্যাক্সিস)। আর এই লক্ষণগুলো হলো দ্রুত শ্বাসকষ্ট, অজ্ঞান হওয়া, মুখ ফুলে যাওয়া, বুক ধড়পড় করা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া। যেমন-
  • দ্রুত শ্বাসকষ্ট।
  • মুখ ফুলে যাওয়া।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলি দেখা দিলে কোন বিলম্ব না করে, ভালো কোন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

অ্যালার্জি হওয়ার কারণ কি?- What causes allergies?

অ্যালারজির সমস্যা হওয়ার বিভিন্ন ধরণের কারণ হতে পারে, যা আমাদের চারপাশে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এই কারণগুলো সাধারণত ধুলাবালি, খাবার (যেমন দুধ, বাদাম) ঔষধ, গাছের রেণু, পশুর লোম এবং রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত উপাদান, যেমন পারফিউম, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি। এ সম্পর্কে নিম্নে আরো দেখুন- 
  • খাবার- বাদাম, সীফুড, দুধ।
  • পশুর লোম- কুকুর, বিড়াল।
  • গাছের রেণু- বসন্তকালীন ফুল।
  • রাসায়নিক- ডিটারজেন্ট, পারফিউম।
  • ঔষধ- অ্যান্টিবায়োটিক, পেনিসিলিন।
  • ধুলাবালী- ঘরের মাটি, কার্পেট, রাস্তার ধুলা।

অ্যালার্জি কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস- Some important tips for allergies

আপনি যদি অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে নিম্নে সাধারণ কিছু উপাদান বা পরিস্থিতি যেগুলোর কারণে আপনার অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই, নিম্নের বিষয়গুলি এড়িয়ে চলার চেস্টা করুন-
  • মানসিক চাপঅ্যালার্জির সমস্যা বাড়াতে পারে মানসিক চাপ।
  • ধুমপান- সিগারেটের ধোয়া অ্যালার্জি বা শ্বাসকস্টের লক্ষণ বাড়াতে পারে।
  • পশুপ্রেম- পশুর লোম বা দেহের অনেক পদার্থ অ্যালার্জি বৃদ্ধি করতে পারে।
  • কীট পতঙ্গের কামড়- বিভিন্ন কীট পতঙ্গ বা মশার কামড় থকে অ্যালার্জি  হতে পারে।
  • কেমিক্যাল- প্রসাধনী পণ্য বা বাড়ি পরিস্কারের কেমিক্যাল অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে।
  • খারাপ আবহাওয়া- অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়া অ্যালার্জি লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
  • পলিন/ পরাগ- বাতাসে থাকে ফুল বা গাছের পরাগ ও এটি সৃষ্টি করতে পারে অ্যালার্জির সমস্যা।
  • খাবার- অনেক খাবার রয়েছে, যেমন বাদাম, দুধ, ডিম, মাছ, শামুক প্রভৃতি অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে।
  • ধোয়া ও গ্যাস- গাড়ির কালো ধোয়া বা রেডিয়েটর, হিটার থেকে উতপান্ন বিষাক্ত গ্যাস শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা তৈরী করতে পারে।
  • ধোয়া ও অ্যালার্জে-  কার্পেট, বিছানার কভার, ঘরের ধুলো এবং রাস্তায় থাকা ধুলা বা অ্যালার্জেনের  উপস্থিতি অ্যালার্জি বাড়াতে পারে।
আপনার যদি অ্যালার্জি সমস্যা বৃদ্ধি পায় এবং গুরুতর মনে হয়, তাহলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন।

অ্যালার্জি প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায়- Home remedies for allergy prevention

অ্যালার্জি প্রতিরোধে অন্যান্য উপায়ের পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে। এই সকল ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ কম করে, শক্তিশালী করে ইমিউন সিস্টেমকে এবং অ্যালার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। নিম্নে উপাদানগুলো দেখুন-

*** মধু ও আদা- মধু ও আদা এই উপাদান দু'টি শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এই জন্য মধু ও আদা গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে, শ্বাসনালীর সমস্যা অনেক কমে যায়।
*** লেবুর পানি- লেবুতে পাওয়া যায় ভিটামিব সি, যা অ্যালার্জির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাই, প্রতিদিন সকালে গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করুন।
*** কালোজিরা- শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে কালোজিরা আরো শক্তিশালী করে। এইজন্য প্রতিদিন সকালে কালোজিরা এক চা চামচ করে খাওয়া ভালো।
** তুলসি পাতা- অ্যালার্জি কমাতে অনেক কার্যকর তুলসী পাতা। এইজন্য তুলসী পাতা কাচা চিবিয়ে বা চায়ের সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে।
*** হালদি দুধ- আধা চা চামচ হলুদের সঙ্গে এক গ্লাস গরম দুধ মিশিয়ে রাতে খেলে, অনেক উপশম পাওয়া যায় অ্যালার্জি থেকে।
** গরম পানির ভাব- সর্দি বা নাক বন্ধ হলে গরম পানির ভাব নিন। এতে পরিস্কার করে দেয় শ্বাসনালীকে।

অ্যালার্জি থেকে মুক্ত পেতে লাইফস্টাইল টিপস- Lifestyle tips to get rid of allergies

অ্যালার্জি থেকে মুক্ত থাকার জন্য এবং অ্যালার্জি মুক্ত জীবন যাপন করার জন্য, সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলা যায়। চলুন দেখি টিপসগুলো- 
  • বাইরে বের হলে ধুলাবালি থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
  • পোষা প্রাণীর জত্ন নেওয়ার সময়, তাদের গায়ের লোম ও ত্বক থেকে দূরে থাকুন।
  • নিয়মিত ঘর পরিস্কারের সথে সাথে বিছানার চাদর ও পর্দা ধুয়ে নিন।
  • কেমিক্যালজুক্ত পণ্য বা পারফিউম ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।
  • যে খাবারে অ্যালার্জি আছে, এমন খাবার না খাওয়াই ভালো।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন- When to consult a doctor

আপনার অ্যালার্জির লক্ষণ যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, শ্বাসকষ্ট বা বুক ধড়পড় করে, ওষুধে কাজ না হয়, ত্বকের র‍্যাশ ছড়িয়ে পড়ে বা Anaphylaxis (অ্যানাফাইল্যাক্সিস) এর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে, দেরী না করে দ্রুত, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

অ্যালার্জি সমস্যা সমাধানের ঘরোয়া উপায়- শেষকথাঃ Home remedies for allergy problems

যদিও, অ্যালার্জি একটি সাধারণ সমস্যা, তবে ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করে, সচেতনতা এবং সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে খুব সহজেই উপশম পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া, নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে ব্যবস্থা নিলে, এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সুস্থ জীবন আমাদের সকলের কাম্য।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি, "অ্যালার্জি" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।
আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য, আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url