মাথা ব্যথা হওয়ার কারণ কি?- মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

মাথা ব্যথা শরীরিক অন্যান্য সমস্যার মতই সাধারণ একটি সমস্যা, এই সমস্যাটি প্রায় সবার জীবনে কম- বেশি ঘটে থাকে। তাছাড়া, মাথা ব্যথা এমন একটি সমস্যা যার কারণে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।
মাথা ব্যথা বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে এবং প্রতি রকম মাথা ব্যথার ধরণের রয়েছে ভিন্ন কারণ এবং লক্ষণ। তবে, মাথা ব্যথা সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু উপসর্গ এবং ঘরোয়া প্রতিকারও রয়েছে। যার মাধ্যমে মাথা ব্যথার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, "মাথা ব্যথার কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকারের ঘরোয়া উপায়" সম্পর্কে কার্যকরী পদক্ষেপ। তাহলে, চলুন আমরা দেখে নেই- 

মাথা ব্যথা হওয়ার কারণ কি?

মাথা ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে, এরমধ্য প্রধাণত মাইগ্রেন, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, চোখের সমস্যা, ডিহাইড্রেশন, উচ্চ রক্তচাত, হরমোনাল পরিবর্তন, মস্তিস্কের ইনফেকশন ইত্যাদি। আর এই সকল ভিন্ন কারণের জন্য ব্যথার তীব্রতা ভিন্ন হয়। নিম্নে এই সম্পর্কে আরো দেখুন- 

টেনশন বা স্ট্রেস

মানসিক চাপ বা টেনশন হলো মাথা ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ। আপনি যখন অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা চিন্তা করবেন, তখন আপনার মস্তিস্কে অতিরিক্ত টেনশন তৈরী হবে, যা মাথা ব্যথার কারণ। এটি যদিও, সাধারণ চাপের কারণে ঘটে এবং কোন কোন সময় এটি দীর্ঘসময় ধরে চলে।

মাইগ্রেনের সমস্যা

একটি গুরুতর মাথা ব্যথা হলো মাইগ্রেন, যা সাধারণত মাথার এক সাইটে বা পুরো মাথায় অনুভুত হয়। এটি এক ধরণের নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, এটি অতি তীব্র ও ঝাঁকুনির মত ব্যথা তৈরী কর। মাইগ্রেন হতে পারে পরিবেশগত, শরীরের অভ্যান্তরীন সমস্যা, বা খাবারের কারণে হতে পারে।

হরমোনাল পরিবর্তন

এই সমস্যাটি বিশেষ করে মহিলাদের মাসিক চলাকালে বা গর্ভকালীন হরমোনাল পরিবর্তনের সময় মাথা ব্যথা হতে পারে। তাছাড়া, মাসিক বন্ধ হওয়া বা মেনোপজ সময়ে মাথা ব্যথার সমস্যা হয় অনেক মহিলার।

উচ্চ রক্তচাপ

অনেকে আছেন, যারা উচ্চ রক্তচাপে ভূগছেন, তাদের মাথা ব্যথা হতে পারে। এটি অন্যতম একটি শারীরিক সমস্যা, যার চিকিৎসা সময়মত না নিলে সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

ডিহাইড্রেশন

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করার কারণে, শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে মথা ব্যথা হতে পারে। আর এই সমস্যা দেখা দেয়, শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক না থাকার কারণে।

চোখের সমস্যা

যদি কোন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল স্ক্রীন বা কম্পিউটার ব্যবহার করেন, তাহলে তার চোখের স্ট্রেন বা ক্লান্তির কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে।

ঘুমের সমস্যা বা স্লিপ ডিসঅর্ডা

যাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হয়, তাদের মাথা ব্যথার ঝুকি বাড়ে। তাছাড়া, অনিয়মিত ঘুম বা ঘুমের অভাবে সৃষ্টি হতে পারে মাথা ব্যথা।

মস্তিস্কের ইনফেকশন বা শারীরিক অন্য সমস্যা

যদি কারো শারীরের গুরতর সমস্যা, যেমন মেনিনজাইটিস, মস্তিস্কের ইনফেকশন বা টিউমারও কারণ হতে পারে মাথা ব্যথার।

মাথা ব্যথা হওয়ার লক্ষণ কি?

মাথা ব্যথার বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে, যেমন- তীব্র বা তিক্ত ব্যথা, মাথার এক পাশ, দু'ই পাশ বা সমনের দিকে চাপ, আলোর প্রতি সংবেদনশীল, বমি বমিভাব, গা বমি, কিছু সময়ের জন্য চোখে অন্ধকার অনুভূতি ইত্যাদি। এছাড়াও, মাথা ব্যথার লক্ষণগুলো নিম্নরূপ হতে পারে- 
  • ছাপযুক্ত বা তীব্র ব্যথা- মাথার একপাশে বা পুরোমাথায় অনেক সময় তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়।
  • চোখের চারিদিকে ব্যথা- চোখের চারপাশে বা মাথার পিছনে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • মাথা ঘোরা বা মেনেহে ব্যথা- অধিক মাথা ব্যথা অনেক সময় মাথা ঘোরা বা অন্য সমস্যার তৈরী করতে পারে।
  • বমি বমি ভাব বা উম্মাদনা- অনেক সময় মাথা ব্যথার সঙ্গে বমি বা উম্মাদনা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে মাইগ্রেশনের ব্যথার ক্ষেত্রে।
  • অসুস্থ বোধ করা- অনেক সময় মাথা ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে শরীর দুর্বল মনে হতে পারে।

মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে, যেমন- পর্যাপ্ত পানি পান করা, নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়া, আদা চা পান করা, ঠান্ডা বা গরম সেঁক দেওয়া, ল্যাভেন্ডার বা মিন্ট তেলের সুগন্ধ শ্বাসে নেওয়া এবং গলা বা মাথায় হালকা ম্যাসেজ করা। এই সম্পর্কে নিম্নে আরো দেখুন-

অ্যারোমাথেরাপি ব্যবহার

অ্যারোমাথেরাপির ব্যবহার করা, বিশেষকরে ল্যাভেন্ডার তেল বা মেন্টল তেল ব্যবহার করলে মাথা ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। এর জন্য প্যাডে বা অল্প তুলায় তেল মাখিয়ে নাকের কাছে রাখুন। এর গন্ধ্য শ্বাসের সঙ্গে মস্তিস্কে প্রবাহীত হলে মাথা ব্যথা উপশমে সাহায্য করে।

ঠান্ডা বা গরম সেঁক দেওয়া

মাথা ব্যথা কমাতে ঠান্ডা বা গরম সেঁক অনেক কার্যকর। কারণ, রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে গরম সেঁক সাহায্য করে, ফলে মাথা ব্যথা কমে। অপরদিকে ঠান্ডা সেঁক আচ্ছন্ন স্থানে বা মাথার পেছনে দিলে মাথার রক্ত নালীকে সংকুচিত করে, এতে মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা

মাথা ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ ডিহাউড্রেশন। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে, ঠিক থাকে শরীরের পানির ভারসাম্য, ফলে মাথা ব্যথা কমতে পারে। স কারণে প্রতিদিন ৮/১০ গ্লাস পানি পানের অভ্যেস করুন।

হালকা ব্যায়াম করুন

মাথার পেশির চাপ কমাতে হালকা যোগ বা স্ট্রেচিং ব্যায়াম সাহায্য করতে পারে। আবার শ্বাস প্রশ্বাসের যোগাসন বা ব্যায়াম করলে শীথিল হতে পারে শরীর এবং মাথা ব্যাথা কমতে পারে।

ক্যাফেইন গ্রহন

অনেক মানুষের মাথা ব্যথা কমে ক্যাফেইন গ্রহনের ফলে। তবে, এটি কখনই বেশি পরিমাণে গ্রহন করা ঠিক নয়, কারণ, অতিরিক্ত ক্যাফেইন হতে পারে মাথা ব্যথার কারণ।

তেল মালিশ করুন

মাথা ব্যথা কমাতে অনেক কার্যকরী উপায় তেল মালিশ। এক্ষেত্রে জোজোবা তেল বা নারকেল তেল মাথা মালিশ করলে, মাথার রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, ফলে মাথা ব্যথা কমে।

মধু ও থাইম পান করা

মাথা ব্যথা উপশমে থাইম ও মধু অনেক উপকারি উপাদান। এরজন্য ১ চামচ মধুর সঙ্গে পরিমাণমত থাইম পাতা মিশিয়ে খেলে মাথা ব্যাথা উপশম হয়।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন

শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের মাধ্যামে মাথা ব্যথা কমানো সম্ভব। কারণ, বিশ্রাম নেওয়ার কারণে মস্তিস্কের চাপ কমে এবং প্রশনিত হয় মাথা ব্যথা।

নিয়মিত গোসল করা

গরম পানিতে গোসল করাও মাথা ব্যথা কমাতে অনেক সাহায্য করে। কারণ, এটি স্নায়ু এবং শিথিল করার মাধ্যমে মাথা ব্যথা কমে।

মাথা ব্যথা সারতে ঘরোয়া উপায়- শেষকথা

মাথা ব্যথা যদিও কোন গুরুতর রোগের লক্ষণ নয়, তবে যদি মাথা ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে কিংবা নিয়মিত হতে থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাছাড়া, মাথা ব্যথার যেহেতু অনেক কারণ রয়েছে, তাই সঠিক কারণ নির্ধারণ করার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও প্রয়োজন।
আপনি চাইলে উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া উপায়গুলো মাথা ব্যাথা থেকে রক্ষা পেতে কাজে লাগাতে পারেন এবং সহজেই মাথা ব্যথার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব মাথা ব্যথা।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি, "মাথা ব্যথার কারণ, লক্ষণ এবং মাথা ব্যথা সারতে ঘরোয়া উপায়" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমারা আশাবাদী।
আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url