বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নওগাঁর মাটির প্রাসাদ
আরো পড়ুনঃ নওগাঁ জেলার প্রাচীন ইতিহাস- নওগাঁ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত হয়েছে?
গ্রাম প্রধান বাংলাদেশ বিভিন্ন ঐতিহ্যে ভরপুর। বাংলাদেশের এমনি এক ঐতিহ্য মাটির বাড়ি। প্রতিটি গ্রামে রয়েছে প্রচুর মাটির বাড়ী। বিশেষ করে বরেন্দ্র এলাকা হিসাবে খ্যাত, নওগাঁ জেলার প্রতিটি গ্রামে এই বাড়ী লক্ষ করা যায়।
আর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাটির প্রাসাদটি নওগাঁ জেলায় অবস্থিত। যা, দেশ এমনকি দেশের বাইরেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে এবং প্রতিদিন শতশত মানুষ এই বাড়ীটি দেখার জন্য ভিড় জমান। যদিও, বাড়ীটি আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে, ব্যপকভাবে প্রচারিত হলে এটি সবার নজর কাড়ে। যা বর্তমানে নওগাঁ জেলার মাটির প্রাসাদ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। আর আজকের আলোচনায় আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, "বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নওগাঁর মাটির প্রাসাদ" সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই ঐতিহাসিক মাটির বাড়ী সম্পর্কে-
নওগাঁর মাটির প্রাসাদের অবস্থান
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নওগাঁর মাটির প্রাসাদটি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের, নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার অন্তরগত চেরাগপুর ইউনিয়নের, অলিপুর গ্রামে অবস্থিত। এই প্রাসাদটি মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে।
নওগাঁর মাটির প্রাসাদের ইতিহাস
এই মাটির এই প্রাসাদটি সমশের আলী মন্ডল এবং তাহের আলী মন্ডল (তারা আপন সহদর ভাই) ১৯৮৬ সালে শুধুমাত্র কাদামাটি দিয়ে নির্মাণ করেন। তারা মূলত সখের বসে এই দ্বিতল বাড়ি বা প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন।
এই দ্বিতল ভবন বা মাটির প্রাসাদটি নির্মাণ করার জন্য আশ পাশের প্রায় ১ শত এর অধিক কারিগর কাজ করেন। এই প্রাসাদটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় ৯ মাসের মত। তবে, প্রাসদের সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে সময় লেগেছিল প্রায় ১ বছর।
নওগাঁর মাটির প্রাসাদের নির্মাণ কৌশল
৭ একর বা ২১ বিঘা ভুমির উপর বিশাল আকৃতির প্রাসদটি তৈরী করার জন্য, কোন প্রকার ইট বা সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। তাই, এই প্রাসাদটি নির্মাণ করার জন্য বিশেষ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, মাটির দেয়াল প্রতিবার সর্বচ্চ এক থেকে দেড় ফুট উচু করে দেওয়া যায়, এর বেশি সম্ভব নয়।
তাছাড়া, এই দেয়াল দেওয়ার পর সেটি শুকানোর জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৫ থেকে ৭ দিনের মত। দেয়াল শুকিয়ে গেলে পুনরায় আগের উচ্চতায়, নতুন দেয়াল দিতে হয়। এইভাবে প্রায় ২২ ফুট উচ্চতার দ্বিতল ভবনটির দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছিল।
দেওয়ালের নির্মাণ লাজ শেষ হলে, এর ছাউনি হিসাবে ব্যবহার করা হয় টিন। আর প্রাসাদটির ছাউনি দেওয়ার জন্য প্রায় ২০০ বান্ডিল টনের প্রয়োজন পড়ে। মাটির দেওয়ালের স্থায়িত্ব এবং সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য চুন ও আলকাতরা ব্যবহার করা হয়েছিল।
নওগাঁর মাটির প্রাসাদের বিবরণ
মাটির প্রাসাদটি প্রায় ৭ একর বা ২১ বিঘার বিশাল ভূমির উপর অবস্থিত। প্রাসদের দীর্ঘ এবং প্রস্থ প্রায় ৩০০ ফিট এবং ১০০ ফিট, যেখানে প্রবেশের জন্য রয়েছে ৭ টি দরজা। এই দরজার যে কোন একটি দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই, যাওয়া যাবে প্রাসাদে থাকা ১০৮ টি কক্ষে।
শুধুমাত্র কাদামাটি দিয়ে তৈরী ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই প্রাসাদে, কোন প্রকার ইট, সিমেন্ট বা বালি ব্যবহার করা হয়নি। মাটির প্রাসাদটিতে সর্বমোট ১০৮ টি কক্ষ রয়েছে, যার মধ্যে ৯৬ টি বড় কক্ষ এবং ১২ টি ছোট কক্ষ। কোন কোন কক্ষে আবার ৪ থেকে ৫ টি করে দরজা রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে চেক করার নিয়ম 2023
প্রাসাদের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে ২৫/৩০ ইঞ্চি চওড়া মাটির প্রাচীর। প্রাসাদটি মূলত নির্মাণ করা হয়েছে, মাটিকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে, এর সঙ্গে হালকা খড় মিশিয়ে। প্রাসদের দোতলায় উঠার জন্য ব্যবহার করা হয় ১৩ সিডি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত জিনিসের মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত মাটির প্রাসদটি নির্মাণের জন্য, মাটি সংগ্রহ করা হয়েছিল, এর পিছনের এলাকা থেকে। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণে মাটি নেওয়ার কারণে, সেখানে তৈরি হয়েছে, বিশাল আকারের একটি পুকুর। এইব বাড়িটির ছাউনি দেওয়ার জন্য প্রায় ২০০ বান্ডিল টিন লেগেছিল।
কিভাবে যাবেন মাটির প্রাসাদ দেখতে
বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে প্রথমে জেলা শহর নওগাঁ বা সরাসরি উপজেলা সদর মহাদেবপুর যেতে হবে। সেখান থকে আপনি চাইলে রিক্সা, সিএনজি বা অটোতে চড়ে খুব সহজে পাকা রাস্তায় আলিপুর গ্রামে যেতে পারবেন।
মাটির প্রাসাদ দেখে কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য আপনি চাইলে মহাদেবপুরে উপজেলা সদরে থাকা সাধারণ মানের আবাসিকে থাকতে পারবেন আবার ভালোমানের আবাসিকে রাত্রী যাপন করতে চাইলে, নওগাঁ সদরে থাকা ভালো মানের আবাসিকে থাকতে পারবেন। থাকার জন্য আপনা ৩০০ টাকা থেকে মান অনুজায়ী আরো বেশি টাকা লাগবে, প্রতিরাতের জন্য।
মাটির প্রাসাদ দেখে কোথায় খাবেন
যদিও অলিপুর গ্রামে ভাতের হোটেল না থাকলেও, হালকা খাবারের জন্য অনেক স্টল রয়েছে। আর ভাত খাওয়ার জন্য আপনি মহাদেবপুর কিংবা নওগাঁ সদরে খেতে পারবেন। তবে, মাটির প্রাসাদ দেখতে গিয়ে কিন্তু, নওগাঁর বিখ্যাত খাবার প্যাড়া সন্দেশ খেতে ভুলবেন না।
নওগাঁর মাটির প্রাসাদ- শেষকথা
মাটির প্রাসাদ, যা আপনাকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি দেয় আরাম দায়ক রাত্রী যাপনের সুযোগ। মাটির মাড়িতে থাকা অনেক আরামদায়ক, কারণ এই বাড়িগুলে আপনাকে শীতের সময় গরম রাখবে এবং গরমের সময় ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।
আপনারা চাইলে ঘুরে আসতে পারেন, নওগাঁ জেলার বিভিন্ন গ্রাম। সেখানে প্রতিটি গ্রামে রয়েছে, আরাম দায়ক গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির বাড়ি। যদিও, মাটির বাড়ি শুনতে মনে ভয় জাগতে পারে, কিন্তু না এগুলো এতোই মজবুত যে, একতলা, দু'তলা এমকি তিনতলা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগন, আমরা আশাকরি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি, "বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নওগাঁর মাটির প্রাসাদ" সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অনেক তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। বিশেষ করে, যারা এই প্রাসাদটি দেখতে চান, তাদের জন্য।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে টেলিটক সিমের নাম্বার চেক করবেন
আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন, যেন তারাও উপকৃত হন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url